পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
ছন্দ

দাঁড়িয়ে থেমে। জন্তুর পা, পাখির পাখা, মাছের পাখনা ‘দুই’ সংখ্যার যোগে চলে। সেই নিয়মিত গতির উপরে যদি আর-একটা একের অতিরিক্ত ভার চাপানো যায় তবে সেই গতিতে ভারসাম্যের অপ্রতিষ্ঠতা প্রকাশ পায়। এই অনিয়মের ঠেলায় নিয়মিত গতির বেগ বিচিত্র হয়ে ওঠে। মানুষের দেহটা তার দৃষ্টান্ত।[১] আদিমকালের চারপেয়ে মানুষ আধুনিক কালে দুই পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তার কোমর থেকে পদতল পর্যন্ত দুই পায়ের সাহায্যে মজবুত, কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত টলমলে। এই দুই ভাগের অসামঞ্জস্যকে সামলাবার জন্যে মানুষের গতিতে মাথা হাত কোমর পা বিচিত্র হিল্লোলে হিল্লোলিত। পাখিও দুই পায়ে চলে কিন্তু তার দেহ স্বভাবতই দুই পায়ের ছন্দে নিয়মিত, টলবার ভয় নেই তার। দুইমাত্রায় অর্থাৎ জোড়মাত্রায় যে-পদ বাঁধা হয় তার মধ্যে দাঁড়ানোও আছে চলাও আছে, বেজোড়মাত্রায় চলার ঝোঁকটাই প্রধান। এইজন্যে অমিত্রাক্ষরে যেখানে-সেখানে থেমে যাবার যে নিয়ম আছে সেটা পালন করা বিষমমাত্রার ছন্দের পক্ষে দুঃসাধ্য। এইজন্যে বেজোড়মাত্রায় পদ্যধর্মই একান্ত প্রবল। চেষ্টা করে দেখা যাক বেজোড়মাত্রার দরজাটা খুলে দিয়ে। প্রথম পরীক্ষা হোক তিনমাত্রার মহলে।[২]

বিরহী গগন ধরণীর কাছে
পাঠাল লিপিকা। দিকের প্রান্তে
নামে তাই মেঘ, বহিয়া সজল
বেদনা, বহিয়া তড়িৎ-চকিত
ব্যাকুল আকুতি। উৎসুক ধরা
ধৈর্য হারায়, পারে না লুকাতে
বুকের কাপন পল্লবদলে।

  1. দ্রষ্টব্য ১১১ পৃষ্ঠা।
  2. তিনমাত্রার ছন্দে যে ইচ্ছামতো যেখানে-সেখানে থামা চলে না, একথা ৪৪ পৃষ্ঠাতেও দৃষ্টান্তযোগে দেখানো হয়েছে।