দিশে-দিশান্তরে। কী অনাদরে তবে
গোপনে বিকশিয়া বাদল রজনীতে
প্রভাত-আলোকেরে কহিলি ‘নহে, নহে’।
উপরের দৃষ্টান্তগুলি থেকে দেখা যায় অসম ও বিষম মাত্রার ছন্দে পংক্তিলঙ্ঘন[১] চলে বটে, কিন্তু তার এক-একটি ধ্বনিগুচ্ছ সমানমাপের, তাতে ছোটো-বড়ো ভাগের বৈচিত্র্য নেই। এইজন্যেই একমাত্র পয়ারছন্দই অমিত্রাক্ষর রীতিতে কতকটা গদ্যজাতীয় স্বাধীনতা পেয়েছে।
এইবার আমার শ্রোতাদের মনে করিয়ে দেবার সময় এল যে, এইসব পংক্তিলঙ্ঘক ছন্দের কথাটা উঠেছে প্রসঙ্গক্রমে। মূলকথাটা এই যে, কবিতায় ক্রমে-ক্রমে ভাষাগত ছন্দের আঁটা-আঁটির সমান্তরে ভাবগত ছন্দ উদ্ভাবিত হচ্ছে। পূর্বেই বলেছি তার প্রধান কারণ কবিতা এখন কেবলমাত্র শ্রাব্য নয়, তা প্রধানত পাঠ্য। যে সুনিবিড় সুনিয়মিত ছন্দ আমাদের স্মৃতির সহায়তা করে তার অত্যাবশ্যকতা এখন আর নেই। একদিন খনার বচনে চাষবাসের পরামর্শ লেখা হয়েছিল ছন্দে।[২] আজকালকার বাংলায় যে ‘কৃষ্টি’ শব্দের উদ্ভব হয়েছে খনার এইসমস্ত কৃষির ছড়ায় তাকে নিশ্চিত এগিয়ে দিয়েছিল।[৩] কিন্তু এইধরনের কৃষ্টি প্রচারের ভার আজকাল গদ্য নিয়েছে। ছাপার অক্ষর তার বাহন, এইজন্যে ছন্দের পুঁটুলিতে ঐ বচনগুলো মাথায় করে বয়ে বেড়াবার দরকার হয় না। একদিন পুরুষও আপিসে যেত পালকিতে, মেয়েও সেই উপায়েই যেত শ্বশুরবাড়িতে। এখন রেলগাড়ির প্রভাবে উভয়ে একত্রে একই রথে জায়গা পায়। আজকাল গদ্যের অপরিহার্য প্রভাবের দিনে ক্ষণে-ক্ষণে দেখা যাবে কাব্যও আপন গতিবিধির জন্যে বাধাছন্দের ময়ুরপংখিটাকে অত্যাবশ্যক বলে গণ্য করবে না। পূর্বেই বলেছি অমিত্রাক্ষর ছন্দে