পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গদ্য-ছন্দ
১৬১

ঘর নিস্তব্ধ, স্তব্ধ সব বাড়ির লোক,
বাতির শিখা নিবো-নিবো, তার থেকে সবুজ ধোঁয়া উঠছে,
তার আলো পড়ছে আমার চোখের জলে।
ঘণ্টা বাজল, রাতদুপুরের ঘণ্টা,
বিছানায় উঠে বসলুম, ভাবতে লাগলুম অনেক কথা।

মনে পড়ল, যে-ডাঙাটা দেখছি সে চাং-আনের কবরস্থান;
তিনশো বিঘে পোড়ো জমি,
ভারি মাটি তার, উঁচু-উঁচু সব ঢিবি;
নিচে গভীর গর্তে মৃতদেহ শোওয়ানো।
শুনেছি মৃত মানুষ কখনো কখনো দেখা দেয় সমাধির বাইরে।
আজ আমার প্রিয় এসেছিল ইঁদারায় ডুবে যাওয়া সেই ঘড়া,
তাই দুচোখ বেয়ে জল পড়ে আমার কাপড় গেল ভিজে।[১]

এতে পদ্যছন্দ নেই, এতে জমানো ভাবের ছন্দ। শব্দবিন্যাসে সুপ্রত্যক্ষ অলংকরণ নেই, তবুও আছে শিল্প।

 উপসংহারে শেষকথা এই যে, কাব্যের অধিকার প্রশস্ত হতে চলেছে। গদ্যের সীমানার মধ্যে সে আপন বাসা বাঁধছে ভাবের ছন্দ দিয়ে। একদা কাব্যের পালা শুরু করেছি পদ্যে, তখন সে মহলে গদ্যের ডাক পড়েনি। আজ পালা সাঙ্গ করবার বেলায় দেখি কখন অসাক্ষাতে গদ্যে-পদ্যে রফানিষ্পত্তি চলছে। যাবার আগে তাদের রাজিনামায় আমিও একটা সই দিয়েছি। এককালের খাতিরে অন্যকালকে অস্বীকার করা যায় না।

 বঙ্গশ্রী— ১৩৪১ বৈশাখ
  1. য়ুয়ান চেন-নামক চৈনিক কবির (খ্রী ৭৭৯-৮৩১) একটি কবিতার আর্থার ওয়ালে-কৃত The Pitcher শীর্ষক ইংরেজি তরজমা থেকে অনূদিত। Ernest Benn-এর The Augustan Book of English Poetry গ্রন্থমালা দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তম পুস্তক: Poems from the Chinese: পৃ ২৫-২৬ দ্রষ্টব্য।