পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৬
ছন্দ

হিসাবের গোল থাকে না। ‘বেড়ে ওঠেক্‌রমে'— বস্তুত সংস্কৃত ছন্দের নিয়মে ‘ক্র’ পরে থাকাতে ‘ওঠে’র ‘এ’ স্বরবর্ণে মাত্রা বেড়ে ওঠা উচিত। তুমি বলতে পার আমরা সাধারণত শব্দের প্রথম বর্ণস্থিত র-ফলাকে দুই মাত্রা দিতে কৃপণতা করি। ‘আক্রমণ’ শব্দের ‘ক্র’কে তার প্রাপ্য মাত্র। দিই, কিন্তু ‘ওঠে ক্রমে’র ‘ক্র’ হ্রস্বমাত্রায় খর্ব করে থাকি। আমি সুযোগ বুঝে বিকল্পে দুইরকম নিয়মই চালাই।[১]

 ২। ভক্‌ত | সেথায় | খোল দ্বা | • • র্ |— এইরকম ভাগে কোনো দোষ নেই। কিন্তু তুমি যে ভাগ করেছিলে | র • • | এটা চলে না.; যেহেতু ‘র’ হসন্ত বর্ণ, ওর পরে স্বরবর্ণ নেই, অতএব টানব কাকে।

 ৩। ‘জনগণ’ গান যখন লিখেছিলেম তখন ‘মারাঠা’ বানান করিনি। মরাঠিরাও প্রথমবর্ণে আকার দেয় না। আমার ছিল ‘মরাঠা’। তারপরে ধারা শোধন করেছেন তাঁরাই নিরাকারকে সাকার করে তুলেছেন, আমার চোখে পড়েনি।[২]

  1. দ্রষ্টব্য পৃ ১৮১ পাদটীকা ২। সংস্কৃত ছন্দে কোনো শব্দের আরম্ভে যুক্তাক্ষর থাকলে পূর্ববর্তী শব্দের শেষ স্বরটি গুরু বলে গণ্য হয়। বাংলায় সাধারণত তা হয় না। তবে সুযোগ বুঝে বৈকল্পিক নিয়ম চালানো যায়। যথা—

    গুরু গুরু গুরু নাচের
    ডমরু বাজিল ক্ষণে ক্ষণে।
    —বর্ষামঙ্গল, নটরাজ (বনবাণী)

     এখানে ‘ক্ষণে ক্ষণে’র উচ্চারণরূপ হচ্ছে ‘ক্ষণেক্‌ক্ষণে’। কিন্তু

    ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে
    অকারণে গান গাই গো।
    —অহৈতুক, নটরাজ (বনবাগী)

     এখানে ‘ক্ষণে ক্ষণে'র উচ্চারণরূপ ‘ক্ষণে-ক্ষণে’। এ-প্রসঙ্গে “বাংলাছন্দে ধ্বনিপ্রয়োগ” প্রবন্ধ (বৈশাখী ১৩৫১ পৃ ১৩—২০) দ্রষ্টব্য।

  2. এই গানটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় (১৮৩৩ শক, মাঘ)। সেখানে ‘মারাঠা’ই আছে। সম্ভবত পাণ্ডুলিপিতে ছিল ‘মরাঠা’।