পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিঠিপত্র
১৯৭

 ৪। ‘জাগিয়ে’ ও ‘রটিয়ে’ শব্দের ‘গিয়ে’ ও ‘টিয়ে’ প্রাকৃত-বাংলার মতে একমাত্রাই। আমি যদি পরিবর্তন করে থাকি সেটাকে স্বীকার করবার প্রয়োজন নেই।

 ১৯২৯ নবেম্বর

 তুমি যে ‘ম্লান’ শব্দটিকে হসন্তভাবে উচ্চারণ কর এ আমার কাছে নতুন লাগল। আমি কখনই ‘ম্লান্‌’ বলিনে। প্রাকৃত-বাংলায় যে-সব শব্দ অতিপ্রচলিত তাদেরই উচ্চারণে এইরকম স্বরলুপ্তি সহ্য করা চলে। ‘ম্লান’ শব্দটা সে-জাতের নয় এবং ওটা অতি সুন্দর শব্দ, ওকে বিনা দোষে জরিমানা করে ওর স্বরহরণ কোরো না, তোমার কাছে এই আমার দরবার।[১]

 যতি বলতে বোঝায় বিরাম।[২] ছন্দ জিনিসটাই হচ্ছে আবৃত্তিকে বিরামের বিশেষ বিধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা।

ললিত ল । বঙ্গ ল । তা পরি । শীলন।[৩]

প্রত্যেক চারমাত্রার পরে বিরাম।

বদসি যদি । কিঞ্চিদপি।[৪]

পাঁচ পাঁচ মাত্রার শেষে বিরাম। তুমি যদি লেখ ‘বদসি যদ্যপি’ তাহলে

  1. মিল বা ছন্দের খাতিরে ‘ম্লান’ শব্দটিকে কখনও কখনও ‘ম্লান্’-রূপে উচ্চারণ করার প্রয়োজন হয়। যথা—

    দেবী,  আজি আসিয়াছে অনেক যন্ত্রী শুনাতে গান
    অনেক যন্ত্র আনি।
    আমি আনিয়াছি ছিন্নতন্ত্রী নীরব স্নান
    এই দীন বীণাখানি।
    —চিত্রা সাধনা

  2. বতির্জিহ্বেষ্টবিভ্রামস্থানম্, ছন্দোমঞ্জরী ১।১৯; যতির্বিচ্ছেদঃ, পিঙ্গলচ্ছন্দঃসুত্রম্ ৬।১।
  3. গীতগোবিন্দ, প্রথম সর্গ, তৃতীয় গীত।
  4. গীতগোবিন্দ, দশম সর্গ, প্রথম গীত। দ্রষ্টব্য পৃ ১২৬।