পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩১

সংজ্ঞাপরিচয়

 অক্ষর (পৃ ৩-৪)— বাংলায় অক্ষর শব্দের অর্থ অনিশ্চিত। এ শব্দে কখনও বোঝায় হসন্ত বর্ণ, কখনও স্বরান্ত,(যুক্ত বা অযুক্ত) বর্ণ। ছন্দের আলোচনায় অক্ষর শব্দটি সাধারণত একই সঙ্গে এই দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই জন্যই পু. ণ্য. বা. ন্ শব্দে চার অক্ষর ধরা হয়। অক্ষরসংখ্যা অনেক সময়ই লিপি ও বানানরীতির উপরে নির্ভর করে। তাই আ. ল্. প. না শব্দে চার অক্ষর, অথচ ক. ল্প. না শব্দে তিন অক্ষর। রবীন্দ্রনাথ এই প্রচলিত অর্থেই অক্ষর শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন।

 কেউ কেউ বর্ণ এবং অক্ষর এই শব্দদুটিকে ভিন্নার্থক বলে গণ্য করেন। তাঁদের মতে বর্ণ মানে letter এবং অক্ষর মানে syllable। সংস্কৃত ছন্দশাস্ত্রে এই দুটি শব্দ একার্থেই ব্যবহৃত হয়। উক্ত শাস্ত্রে প্রযুক্ত অক্ষর বা বর্ণ শব্দের দ্বারা অনেক সময় সিলেব্‌ল্ বোঝালেও অক্ষর আর সিলেব্‌ল্ এক নয়। ছন্দ শব্দে দুটি অক্ষর ছ+ন্দ, প্রথমটি অযুক্ত এবং দ্বিতীয়টি যুক্ত। কিন্তু তার সিলেব্‌ল্-বিভাগ হচ্ছে ছন্+দ। শব্দের মধ্যে বা অন্তে যুক্তাক্ষর বা যুক্তবর্ণ থাকলেই অক্ষর-বিভাগ ও সিলেব্‌ল্-বিভাগের পার্থক্য স্পষ্ট বোঝা যায়। রবীন্দ্রনাথ বর্ণ বা অক্ষর শব্দকে সিলেব্‌ল্ অর্থে ব্যবহার করেন নি।

 অক্ষরবৃত্ত (পৃ ৫২)— বাংলা ছন্দের তিনটি শাখার (পৃ ১৩২) মধ্যে যে শাখাটিকে রবীন্দ্রনাথ সাধুছন্দ বা সাধুভাষার ছন্দ নাম দেন, তাকে অনেক সময় বলা হয় অক্ষরবৃত্ত। কেননা প্রচলিত হিসাবে এ শাখার সব ছন্দেই একএক অক্ষরকেই একএক মাত্রা বলে গণনা করা হয়। তাই রবীন্দ্রনাথও এই শ্রেণীর ছন্দকে ‘অক্ষরগোনা’ বলে পরিচয় দিয়েছেন (পৃ ১৪২, ১৯২)। কিন্তু অক্ষরবৃত্ত নামটি সমীচীন নয়, কারণ অক্ষর শব্দটাই অনিশ্চিতার্থক। রবীন্দ্রনাথই বলেছেন, “আক্ষরিক ছন্দ