পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৩৯

শয্যা-বস্ত্র নাই |
শুধু কৌপীন চাই |
অরণ্যে তার ঠাঁই |
অন্তরে নাই ভয়-চিন্তা।

এর প্রতিপদে কলাসংখ্যা হিসাবে আট মাত্রা, কেবল চতুর্থ পদে এগার কলামাত্রা।

 রবীন্দ্রনাথ মনে করেন পয়ার ত্রিপদী চৌপদী সবই দুইবর্গ মাত্রার ছন্দ (পৃ ১৩); সেজন্য এগুলিকে কখনও বলেছেন সমমাত্রার ছন্দ (পৃ ৩৬), আর কখনও বলেছেন দ্বৈমাত্রিক ছন্দ (পৃ ৬৭)। অর্থাৎ তাঁর মতে এ সব ছন্দোবন্ধ দুইমাত্রার উপপর্ব নিয়েই গঠিত হয়। পয়ার সম্বন্ধে এই উক্তি সত্য বটে, কিন্তু ত্রিপদী-চৌপদী সম্বন্ধে এ কথা সম্পূর্ণ সত্য নয়। কেননা তিন মাত্রার উপপর্ব কিংবা তিন ও দুই মাত্রার পর্যায়ক্রমিক উপপর্ব নিয়েও ত্রিপদী চৌপদী হতে পারে। ত্রৈমাত্রিক উপপর্বের চৌপদীর দৃষ্টান্ত দিলাম (পৃ ১৩৯)।—

সে ধারার টানে | তরীখানি চলে,
সেই ডাক শুনে | মন মোর টলে,
এই টানাটানি | ঘুচাও জগার,
হয়েছে বিষম | দায়।

এই চৌপদী পংক্তিটির প্রতিপদে দুই পর্ব; প্রতিপর্বে ছয় ও প্রতিউপপর্বে তিন মাত্রা, শেষ উপপর্বটি অপূর্ণ। প্রথম পাঁচটি পর্বে— উপযতি লুপ্ত, সুতরাং উপপর্ববিভাগ সুস্পষ্ট নয়। এটাও চৌপদী, অথচ এটা দুইবর্গ মাত্রার ছন্দ নয়, এটুকুই লক্ষণীয়।

 ‘পদ’ শব্দের সংজ্ঞাপরিচয় দ্রষ্টব্য।

 ছন্দ (পৃ ১১৫)—ছন্দ কথাটি বিভিন্ন স্থলে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। এক অর্থ সৌষম্য বা সুসংগত ভঙ্গি। যেমন—মুখের ছন্দ, ছবির ছন্দ,