চাষের: সময়ে | যদিও: করিনি | হেলা,
ভুলিয়া: ছিলাম | ফসল: কাটার | বেলা।
এর প্রতিপর্বে ছয় মাত্রা এবং প্রতি পূর্ণ উপপর্বে তিন মাত্রা সুস্পষ্ট।
শরতে: শিশির | বাতাস: লেগে
জল ভরে আসে | উদাসী: মেঘে।
এখানে দ্বিতীয় লাইনের প্রথম পর্বের উপপর্ববিভাগ সুস্পষ্ট নয়। ‘ভরে’ শব্দের মধ্যবর্তী উপযতি লুপ্ত হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে।
এই দুটি দৃষ্টান্তই মাত্রাবৃত্তবর্গীয়। প্রতিপর্বে ছয় মাত্রা নিয়ে এদের রূপ। সুতরাং এ দুটিকে তিনমাত্রা-উপপর্বের ছন্দ বলতে বাধা নেই।
রবীন্দ্রনাথের মতে বাংলা প্রাকৃতবর্গের ছন্দও তিনমাত্রা-উপপর্ব নিয়ে গঠিত (পৃ ৬২)। যথা—
বৃষ্টি: পড়ে- | টাপুর: টুপুর | নদেয়: এল- | বা-ন
এখানেও প্রতিউপপর্বে তিন মাত্রা গণনীয়। তিনটি উপপর্বে এক মাত্রার ফাঁক রয়েছে, আবৃত্তির টানে সে ফাঁক পূরণ করে নিতে হয়। মাত্রাবৃত্তবর্গের ত্রৈমাত্রিক ছন্দে এ-রকম ফাঁক রাখা চলে না। প্রাকৃতবর্গের ছন্দে সাধারণত মাঝে মাঝে উক্তরকম ফাঁক থেকে যায়, তবে প্রয়োজনমতো বেফাঁক ছন্দও রচনা করা চলে (পৃ ৬৪)। যথা—
স্বপ্ন: আমার | বন্ধন্-হীন | সন্ধ্যা: তারার | সঙ্গী
মরণ: যাত্রী | দলে।
কোনো উপপর্বেই ফাঁক নেই। দ্বিতীয় পর্বে উপযতি লুপ্ত হয়েছে বলে উপপর্ববিভাগ সম্ভব নয়। ধা হক, এ-রকম বেফাঁক ছন্দকে লৌকিক ও মাত্রাবৃত্ত উভয় বর্গের অন্তর্গত বলেই গণ্য করা যায়। এ-রকম উভচারী ছন্দের দৃষ্টান্ত বিরল। দ্রষ্টব্য ‘ফাঁক’।
মাত্রাবৃত্তবর্গীয় তিনমাত্রার ছন্দে অমিত্রাক্ষরের মতো যতিস্থাপনের স্বাধীনতা নেই, অর্থাৎ এ ছন্দকে প্রবহমান করা চলে না (পৃ ২১৫)।