পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৪৫

 দণ্ডকল (পৃ ১০৯)— এই ছন্দে প্রতিপাদে বত্রিশ কলামাত্রা থাকে। প্রাকৃতপৈঙ্গলে এই বত্রিশ মাত্রার সমাবেশরীতি সম্বন্ধে কোনো স্পষ্ট নির্দেশ নেই। তবে এই ছন্দের পরিচয় ও দৃষ্টান্ত দেওয়া উপলক্ষ্যে যে দুটি রচনা পাওয়া যায় তার থেকে মনে হয় প্রতিপংক্তির প্রথম দুই মাত্র। আড়ে থাকবে, অর্থাৎ প্রতিপংক্তির গোড়াতেই একটি করে দুই মাত্রার অতিপর্ব থাকা চাই, আর প্রতিপংক্তির শেষ ধ্বনিটি গুরু অর্থাৎ দ্বিমাত্রক হওয়া চাই। ‘কুংতঅরু’র (পৃ ১০৯) কুং এবং ‘কুঞ্জপথে’র (পৃ ১১০) কুঞ্, এই দুটিকে অতিপর্ব বলে গণ্য করলেই এ ছন্দের আসল রূপ পরিস্ফুট হবে। রবীন্দ্ররচিত দৃষ্টান্তটিকে যদি এভাবে রূপান্তরিত করে দেওয়া যায়—

আজি জ্যোৎস্নাহসিত রাতে
মল্লিকা-মালা হাতে
চলিয়াছে সখীসাথে
কুঞ্জপথে-।

তা হলেই দণ্ডকল ছন্দের প্রকৃতি অব্যাহত থাকবে। এখানে অতিপর্ব সহ বত্রিশ মাত্রা গণনীয়। সুতরাং দণ্ডকল ছন্দের ভাগগুলি অসমান বলে মনে করা যায় না।

 দল (পৃ ১০৯)— প্রাকৃতপৈঙ্গলের টীকায় এই শব্দটি পূর্ণযতির বিভাগ অর্থাৎ পংক্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই অর্থে ‘দল’ শব্দটির প্রয়োগ প্রায় দেখা যায় না। বস্তুত এটি পারিভাষিক শব্দ নয়।

 দল শব্দের একটি অর্থ পাপড়ি। যেমন— ফুলের দল, শতদল কমল। এরই সাদৃশ্যে কথাটিকে শব্দপর্ব বা সিলেব্‌ল্ অর্থে পারিভাষিক শব্দ হিসাবে স্বীকার করে নিলে সুবিধা হয়। তা হলে সিলেব্‌ল্‌লগোনা (syllabic) ছন্দকে সহজেই ‘দলমাত্রিক’ ছন্দ বলে বর্ণনা করা যায়। তেমনি দুই সিলেব্‌ল্‌ ও তিন সিলেব্‌ল্ -এর শব্দকেও অনায়াসেই