পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
ছন্দ

দ্বিদল ও ত্রিদল শব্দ বলে পরিচিত করা যায়। যেমন— ছন্‌+দ দ্বিদল শব্দ, বুদ+ধি+মান্ ত্রিদল শব্দ। তা ছাড়া open syllableকে বলা যায় মুক্তদল (দ, ধি) এবং closed syllableকে বলা যায় রুদ্ধদল (ছন্, বুদ্, মান্)। অযুগ্মধ্বনি-যুগ্মধ্বনি অপেক্ষা মুক্তদল-রুদ্ধদল অধিকতর সহজবোধ্য ও নিশ্চিতার্থক। দ্রষ্টব্য ‘ধ্বনি’, ‘যুগ্মধ্বনি’ ও ‘সিলেব্‌ল্’।

 দাদরা— দ্রষ্টব্য ‘তাল’।

 দুইমাত্রার ছন্দ (পৃ ৩৮)—যে ছন্দের উপপর্ব বা ‘চলন’ দুইমাত্রাপরিমিত তাকেই বলা হয়েছে দুইমাত্রার ছন্দ বা দ্বৈমাত্রিক ছন্দ (পৃ ৬৭)। এরই অপর নাম সমমাত্রার ছন্দ। অর্থাৎ চতুর্মাত্রপর্বিক ছন্দকেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন দুইমাত্রার ছন্দ। এই ছন্দেই অমিত্রাক্ষরের প্রবহমানতা স্বাভাবিক (পৃ ১৫৪)। দ্রষ্টব্য ‘সমমাত্রার ছন্দ’।

 দ্বাদশাক্ষর ছন্দ (পৃ ২২৬)—এটি পারিভাষিক নাম নয়। যে ছন্দোবন্ধের প্রতিলাইনে বারটি করে অক্ষরমাত্রা থাকে, তাকেই রবীন্দ্রনাথ দ্বাদশাক্ষর বলে বর্ণনা করেছেন। পয়ারের প্রতিলাইনে থাকে চোদ্দ অক্ষর। তারই তুলনায় একে বলা হয়েছে দ্বাদশাক্ষর। ২২৭ পৃষ্ঠায় যে দৃষ্টান্তটি উদ্ধৃত হয়েছে সেটিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এর প্রত্যেক লাইনে আছে দুটি করে ছয় মাত্রার পর্ব। যেমন—

সে প্রভামণ্ডলী | মাঝে সমুজ্জ্বলা।

এ-রকম ছয়মাত্রা-পর্বের ছন্দে অযুক্তযুক্তনির্বিশেষে অক্ষরমাত্রার প্রয়োগ রবীন্দ্রনাথের কানকে পীড়া দিত। তাই তিনি বলেছেন, এ-রকম ছন্দে ‘প্রত্যেক যুক্ত অক্ষরে রসনা বাধা প্রাপ্ত হয়’ (পৃ ২২৭)। সেইজন্য তিনি নিজেও এককালে ‘তিনমাত্রামূলক’ অর্থাৎ ছয়মাত্রা-পর্বের ছন্দে যুক্তাক্ষর বর্জন করে চলতেন (পৃ ৬৬, ১২৫)। পরবর্তী কালে মানসী রচনার সময়ে যখন তিনি এইজাতীয় ছন্দে অক্ষরমাত্রার পরিবর্তে