পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৮
ছন্দ

অতঃপর চিত্রা কাব্যের ‘দুঃসময়’-নামক কবিতাটি (১৮৯৪) উল্লেখযোগ্য। এর প্রথম দুই লাইন এই—

বিলম্বে এসেছ | রুদ্ধ এবে দ্বার,
জনশূন্য পথ | রাত্রি অন্ধকার।

—দুঃসময়, চিত্রা (রচনাবলী ৪)

‘কথা’ কাব্যের ‘প্রভু বুদ্ধ লাগি’ ইত্যাদি পূর্বোল্লিখিত কবিতাটি (শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা, ১৮৯৭) ‘দুঃসময়’ রচনার পরবর্তী। ‘কাহিনী’ গ্রন্থের ‘লক্ষ্মীর পরীক্ষা’ নাটিকাটিতেও (১৮৯৭) কিছু কিছু ব্যতিক্রমের দৃষ্টাক্ত আছে। যথা—

মরেওনি বটে | জন্মেওনি কভু।...
খবর্দার কেউ | নোড়ো চোড়ো নাকো।

এগুলিকে দ্বাদশাক্ষর ছন্দের পর্যায়ভুক্ত করা যায় না। বস্তুত এগুলি মাত্রাবৃত্ত বা কলাগোনা ছয়মাত্রা-পর্ব ছন্দের ব্যতিক্রম মাত্র। অতঃপর এ প্রসঙ্গে নৈবেদ্য কাব্যের (১৯০১) প্রথম কবিতাটির উল্লেখ করা যেতে পারে। যথা—

তোমার বিচিত্র | এ ভবসংসারে |
কর্মপারাবার | পারে হে,
নিখিল জগৎ | জনের মাঝারে |
দাঁড়াব তোমারি | সম্মুখে।

এটিও ছয়মাত্রা-পর্বের ছন্দ। অথচ এখানে যুগ্মধ্বনি বা রুদ্ধদলকে সংকুচিত করে এক কলামাত্র। বলে গণ্য করা হয়েছে। ফলে এ সব রচনা পড়বার সময় যুক্তাক্ষরগুলিতে রসনা বাধা প্রাপ্ত হয়। এইজন্যই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘তখন ছন্দের সদর রাস্তা ও গ্রাম্য রাস্তার মতো এবড়ো-খেবড়ো থাকত, অভ্যাসের গতিকে কেউ সেটাকে নিন্দনীয় বলে মনেও করেনি’ (পৃ ৬৬)।