ছন্দের রীতি। পলাতকার ছন্দকেও রবীন্দ্রনাথ লৌকিক রীতির পয়ার বলেই মনে করেন, যদিও তা ‘বেড়াভাঙা’ অর্থাৎ অসমপংক্তিক ও প্রবহমান (পৃ ১৫৭)। আঠার মাত্রার লৌকিক দীর্ঘপয়ারের দৃষ্টান্তও আছে। এই দীর্ঘপয়ার প্রবহমান ও অপ্রবহমান দুই-ই হতে পারে (পৃ ১৮৮)। তৃতীয়, মাত্রাবৃত্ত (পৃ ১৩২ পাদটীকা ৫) বা কলাগোনা পয়ার। এ ছন্দে এক কলায় এক মাত্রা ধরা হয়। অযুগ্মধ্বনিতে এক কলা, যুগ্মধ্বনিতে দুই কলা। মানসী কাব্যের ‘নিষ্ফল উপহার’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত পয়ারের প্রথম দৃষ্টান্ত— ‘নিম্নে যমুনা বহে’ ইত্যাদি (পৃ ১৮১ এবং পাদটীকা)। অনতিকাল পরেই রবীন্দ্রনাথ এই নূতন রীতির পয়ার রচনা ত্যাগ করেন (পৃ ৬৭) এবং উক্ত ‘নিষ্ফল উপহার’ কবিতাটিকে ‘নিম্নে আবর্তিয়া ছুটে যমুনার জল’ ইত্যাদি রূপে সাধু বা অক্ষরগোনা পয়ারে পরিবর্তিত করেন (পৃ ১২৩)। সম্ভবত তিনি মাত্রাবৃত্ত পয়ার রচনায় তৃপ্তিলাভ করতে পারেন নি। আরও পরবর্তী কালে কিন্তু তিনি মাত্রাবৃত্ত রীতিতে বহু পয়ার রচনা করেছেন (পৃ ৭৮)। পরবর্তিকালীন মাত্রাবৃত্ত পয়ারের একটি দৃষ্টান্ত এই—
সূর্য চলেন ধীরে সন্ন্যাসী বেশে
পশ্চিম নদীতীরে সন্ধ্যার দেশে
বনপথে প্রান্তরে লুণ্ঠিত করি
গৈরিক গোধূলির ম্লান উত্তরী।
পয়ারের ন্যায় ত্রিপদী-চৌপদীও সাধু, লৌকিক ও মাত্রাবৃত্ত -ভেদে ত্রিবিধ। দ্রষ্টব্য ‘মালঝাঁপ’।
পয়ারজাতীয় ছন্দ (পৃ ৬৬-৬৭)—রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেন সাধু, সমমাত্রার বা দুইমাত্রার ছন্দ তাকেই বলেছেন পয়ারজাতীয়, পয়ারশ্রেণীয় (পৃ ১১৮) বা পয়ারসম্প্রদায় (পৃ ৬৭)। এই বর্গের