পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৬
ছন্দ

ছন্দকেই বলা হয় অক্ষরবৃত্ত বা অক্ষরগোনা (পৃ ১৪২); প্রচলিত মতে অক্ষরসংখ্যা অনুসারেই এ শ্রেণীর ছন্দের মাত্রাগণনা করা হয়।

 অক্ষরবৃত্ত নামের মতো পয়ারজাতীয় নামটিও সমীচীন নয়। কেননা বাংলা ছন্দের তিন শাখাতেই পয়ার রচনা প্রচলিত। ত্রিবিধ পয়ারের কথা পূর্বেই বলা হয়েছে।

 এই পয়ারজাতীয় ছন্দের বিশেষত্ব হচ্ছে তার শোষণশক্তি (পৃ ৩৮) বা স্থিতিস্থাপকতা (পৃ ১২১)। এ কথার অর্থ এই যে, এ রীতির ছন্দে ব্যঞ্জনান্ত যুগ্মধ্বনিকে প্রায় সর্বত্রই সংকুচিত করে এক মাত্রায় পরিণত করা হয়, ফলে যথেচ্ছভাবে যুক্তাক্ষরবহুল শব্দ প্রয়োগ করলেও মাত্রাবৃদ্ধি দোষ ঘটে না। বলা প্রয়োজন যে, এ রীতির ছন্দে শব্দের অন্তস্থিত যুগ্মধ্বনির সংকোচন হয় না।

 পর্ব (পৃ ৯৪)—পংক্তির লঘুঘতিনির্দিষ্ট বিভাগকে বলা হয় পর্ব। পর্বই ছন্দের প্রধান নির্ভর। পর্বের প্রকৃতি, আকৃতি ও সমাবেশপদ্ধতির দ্বারাই ছন্দের রূপ ও অবয়ব নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ পর্বের চেয়ে উপপর্বকেই ছন্দের প্রধান অবলম্বন মনে করতেন। তাই তিনি সমস্ত বাংলা ছন্দকে সম, অসম ও বিষম এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন (পৃ ১৫)। সমমাত্রার ছন্দ মানে দুইমাত্রা-উপপর্বের ছন্দ; অসমমাত্রার ছন্দ মানে তিনমাত্রা-উপপর্বের ছন্দ ও আর, যে ছন্দের পর্ব তিনমাত্রা- ও দুইমাত্রা-উপপর্বের সমবায়ে গঠিত তাকেই বলেছেন বিষমমাত্রার ছন্দ। উপপর্ব বোঝাতে রবীন্দ্রনাথ কখনও ব্যবহার করেছেন ‘চলন’ (পৃ ৩৫) এবং কখনও ব্যবহার করেছেন ‘ভূমিকা’ (পৃ ৫৪)। ত্রৈমাত্রিক ভূমিকা মানে তিন মাত্রার উপপর্ব।

 উপপর্বকে ছন্দের প্রধান অবলম্বন মনে করলেও রবীন্দ্রনাথ পর্ববিভাগকে অস্বীকার করেননি। যখন তিনি বলেন পাঁচ মাত্রার ছন্দ (পৃ ১৫), তখন পাঁচ মাত্রার পর্ব-গঠিত ছন্দই তাঁর অভিপ্রেত; ছয় মাত্রার