পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৫৭

ছন্দ, ছয়মাত্রার কায়দা (পৃ ১১-১২) বা ‘ষড়ঙ্গী’ (পৃ ১০০) বলতে ছয়মাত্রা-পর্বের ছন্দ বোঝায়। পর্ব শব্দ ব্যবহার না করলেও তার প্রতিশব্দ হিসাবে রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি অপারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন—পা (পৃ ১১), পদক্ষেপ (পৃ ৩৪), মাত্রাভাগ (পৃ ৯২), পূর্ণভাগ (পৃ ৯৬), ভাগ (পৃ ১০০), কলা (পৃ ১০১), ধ্বনিগুচ্ছ (পৃ ১৫৩)। এক জায়গায় তিনি পর্ব শব্দটি ব্যবহার করেছেন সংস্কৃত ছন্দের যতিবিভাগ অর্থে (পৃ ১৯০)। সংস্কৃত ও প্রাকৃত ছন্দশাস্ত্রে পর্ব অর্থে ‘গণ’ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। যেমন—চতুষ্কল গণ, মানে চার-কলামাত্রার পর্ব।

 পর্বাঙ্গ (পৃ ৯৫)—এটি অমূল্যবাবুর ব্যবহৃত পরিভাষা। রবীন্দ্রনাথ নিজে এই শব্দটি ব্যবহার করেন নি। পর্বের উপযতি-নির্দিষ্ট উপবিভাগকে অর্থাৎ উপপর্বকেই অমূল্যবাবু বলেন পর্বাঙ্গ। রবীন্দ্রনাথ তাকে কখনও বলেছেন ‘চলন’, কখনও ‘ভূমিকা’।

 প্রদক্ষিণ (পৃ ৩৪)— ছন্দের পূর্ণযতির বিভাগ অর্থাৎ পংক্তিকেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন প্রদক্ষিণ। এ শব্দটিকে পারিভাষিক বলে মনে করা যায় না। এর অর্থেরও স্থিরতা নেই। দ্রষ্টব্য ‘পংক্তি’।

 প্রস্বর (accent)—ইংরেজিতে যাকে বলা হয় এক্‌সেণ্ট্ তার বাংলা অপারিভাষিক নাম ঝোঁক। এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ নানা প্রসঙ্গেই এক্‌সেণ্ট্ অর্থে ঝোঁক শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যেমন, ‘ইংরেজিতে প্রত্যেক শব্দেরই একটি নিজস্ব ঝোঁক আছে’ (পৃ ১)। ছন্দের পরিভাষায় ঝোঁক বা এক্‌সেণ্ট্‌কে বলা যায় প্রস্বর; তাতে প্রস্বরণ, প্রস্বরিত, প্রাস্বরিক প্রভৃতি শব্দ গঠনের সুবিধা হয়।

 বাংলা গদ্যে উচ্চারণের ঝোঁকটা সাধারণত বাক্যের আরম্ভে পড়ে (পৃ ১)। কিন্তু প্রয়োজনমতো ‘বাক্যের পর্বে পর্বে’ও ঝোঁক দেওয়া যায়। আর “বাংলা ছন্দে যে পদবিভাগ হয় সেই প্রত্যেক পদের গোড়াতেই একটি করিয়া ঝোঁকালো শব্দ কাপ্তেনি করে” (পৃ ৯)।