পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৫৯

কই রে কম্বল’ ইত্যাদি দৃষ্টান্ত দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “ইহার সঙ্গে Ah distinctly I remember শ্লোকটি মিলাইয়া দেখিলে দেখা যাইবে ধ্বনির বিশেষ কোনো তফাত নাই” (পৃ ১৭)। এই মিল শুধু দলবিভাজনগত নয়, প্রস্বরস্থাপনগতও বটে। উভয়ত্রই প্রস্বর বা ঝোঁক পড়েছে ছন্দোবিভাগগুলির আদিতে। কিন্তু ইংরেজি ছন্দের সঙ্গে বাংলা চলতি ছন্দের অমিলও আছে। “দেখা গিয়াছে ইংরেজি ছন্দে ঝোঁক পদের [ছন্দোবিভাগের] আরম্ভেও পড়িতে পারে, পদের শেষেও পড়িতে পারে; কিন্তু “বাংলায় আরম্ভে ছাড়া পদের আর কোথাও ঝোঁক পড়িতে পারে না” (পৃ ১৯)।

 প্রাকৃত-বাংলার ছন্দ—দ্রষ্টব্য ‘শাখা’।

 ফাঁক (পৃ ১০)—এটি একটি অপারিভাষিক শব্দ। রবীন্দ্রনাথ এ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করেছেন। এক জায়গায় এটি ব্যবহৃত হয়েছে ছেদ বা যতি অর্থে (পৃ ৯৪)। কোনো কোনো স্থলে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে মাত্রাসংযোগের অবকাশ অর্থে (পৃ ১০)। যেমন—

মহাভারতের কথা | অমৃতসমান--।

এই পয়ারপংক্তিটার প্রথম পদে আট মাত্রা এবং দ্বিতীয় পদে ছয় মাত্রা গণনা করাই সাধারণ রীতি। রবীন্দ্রনাথও তাই করেন (পৃ ৭১, ১৪৩)। কিন্তু তিনি কখনও কখনও পয়ারে চোদ্দ মাত্রা গণনা না করে ষোল মাত্রাও ধরেছেন। সে ক্ষেত্রে তিনি চোদ্দটি শ্রুতমাত্রার পরে পূর্ণযতির স্থলে আরও দুটি অশ্রুতমাত্রা আছে বলে ধরে নেন; চোদ্দটি শ্রুতমাত্রাকে বলেছেন ‘উচ্চারিত মাত্রা’ বা ‘ধ্বনির মাত্রা’ এবং দুটি অশ্রুতমাত্রাকে বলেছেন ‘অনুচ্চারিত মাত্রা’ বা ‘যতির মাত্রা’ (পৃ ৪১,৪৬, ১১৮)। এই যতির মাত্রার অবকাশকেই বলেছেন ফাঁক। পয়ারে শুধু পূর্ণযতির স্থলে নয়, অর্ধযতির স্থলে এবং অন্যত্রও দুই মাত্রার ফাঁক রাখা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন (পৃ ১২০)।