পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬০
ছন্দ

 গানে যতিমাত্রার হিসাব রাখা হয়। কারণ, “সুরের বিরাম হয়, কিন্তু কালের বিরাম হয় না। যেমন সুরের মাত্রা আছে, সেইরূপ বিরামেরও মাত্রা আছে” (জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রণীত স্বরলিপিগীতিমালা, প্রথম খণ্ড, তৃতীয় সং, পৃ ৭)। গানে অবিরত-বিরত-নির্বিশেষে সমগ্র গীতকালের হিসাব রাখার প্রয়োজন আছে। কাব্যছন্দের বিচারে এ-রকম হিসাব রাখা অনাবশ্যক। রস্তুত রবীন্দ্রনাথও সর্বত্র, অর্থাৎ অমিত্রাক্ষর, ত্রিপদী, চৌপদী প্রভৃতি সমস্ত বন্ধে, পূর্ণ, অর্ধ, লঘু এবং উপ-যতির মাত্রাগণনা প্রয়োজন মনে করেন নি।

 ধ্বনিসংকোচের অবকাশ অর্থেও ফাঁক শব্দটির প্রয়োগ দেখা যায় (পৃ ৩৮)। যেমন—

পাষাণ মিলায়ে যায় | গায়ের বাতাসে।

এই পয়ারপংক্তিটাতে যুগ্মধ্বনি আছে মাত্র তিনটি—ষাণ্ যায়্ য়ের্, এবং তিনটিই আছে শব্দের শেষে; বাকি আটটি ধ্বনিই অযুগ্ম। অযুগ্মধ্বনিতে এক মাত্রা এবং যুগ্মধ্বনিতে দুই মাত্রা ধরে হিসাব করলে পাওয়া যাবে প্রথম পদে আট এবং দ্বিতীয় পদে ছয়, মোট চোদ্দ মাত্রা।

           
সংগীত্ তরঙ্‌গি উঠে | অঙ্‌গের্ উচ্‌ছ্বাসে।

এখানেও চোদ্দ মাত্রা। হিসাবটা এই। ছয়টি অযুগ্মধ্বনিতে (‘।’ দণ্ডচিহ্নযুক্ত—ত, গি, উ, ঠে, ছ্বা, সে) ছয় মাত্রা, শব্দের প্রান্তস্থ দুটি অযুগ্মধ্বনিতে (‘ᐱ’ প্রসারচিহ্নযুক্ত—গীত্, গের্) চার মাত্রা এবং শব্দের অপ্রান্তস্থ চারটি অযুগ্মধ্বনিতে (‘ᐯ’ সংকোচচিহ্নযুক্ত—সং, রঙ্, অঙ্, উচ্) চার মাত্রা— মোট চোদ্দ মাত্রা, প্রথম পদে আট এবং দ্বিতীয় পদে ছয়। এই দুই পংক্তির মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাবে যে, দ্বিতীয় পংক্তিতে চারটি যুগ্মধ্বনি সংকুচিত হয়ে মাত্র চার মাত্রার স্থান পেয়েছে, এটাই এই দুই পংক্তির পার্থক্য। এই শ্রেণীর পয়ারে যুগ্মধ্বনিকে