পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৬৯

 এই প্রসঙ্গে বলা সংগত যে, দ্বিজেন্দ্রনাথ মন্দাক্রান্তাকে রূপান্তরিত করেছেন খাঁটি সংস্কৃত আক্ষরিক ও বাংলা মাত্রিক, এই দুই পদ্ধতিতেই। রবীন্দ্রনাথ ও সত্যেন্দ্রনাথ করেছেন শুধু বাংলা মাত্রিক পদ্ধতিতে। তিন জনের বাংলা মাত্রিক পদ্ধতিতে পার্থক্য আছে। দ্বিজেন্দ্রনাথের পদ্ধতি বিশিষ্ট কলামাত্রিক আর রবীন্দ্রনাথের পদ্ধতি সরল কলামাত্রিক। উভয়ের মন্দাক্রান্তাই সংস্কৃত ছন্দশাস্ত্রসম্মত ‘অক্ষর’সংখ্যা -নিরপেক্ষ, মানে তাঁদের মন্দাক্রান্তায় প্রতিপদে সতর ‘অক্ষর’ অর্থাৎ দল (সিলেব্‌ল্) নেই। সত্যেন্দ্রনাথের পদ্ধতিকে বলা যায় দলকলামাত্রিক। তাঁর রচনায় যথানির্দিষ্ট গুরুলঘুক্রমে দলসংখ্যা স্থির আছে, ফলে কলাসংখ্যাও স্থির আছে। তিন জনের রচিত দৃষ্টান্তগুলির পারস্পরিক তুলনা করলেই এই তিন রূপের পার্থক্য ধরা পড়বে। বিশিষ্ট কলামাত্রিক মানে বাংলা অক্ষর-মাত্রিক, অর্থাৎ বাংলা কায়দায় যে পদ্ধতির প্রতি অক্ষরে এক মাত্রা। দ্রষ্টব্য ‘মাত্রা’।

 মাত্রা—এ শব্দটি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মাত্রা শব্দের একটি সাধারণ অর্থ মাপ। এই অর্থে মাত্রা শব্দের প্রয়োগ দ্রষ্টব্য ‘ছন্দের অর্থ’ প্রবন্ধে (পৃ ৪৮-৪৯)। কোনো ক্লাসের সব ছেলেই ‘সমান মাত্রার,’ অর্থ ‘সমান মাপের’। এই অর্থকে আরএকটু নিরূপিত করে নিলে মাত্রা মানে দাঁড়ায় কোনো নির্দিষ্ট য়ুনিট বা একক, যার সাহায্যে কোনো কিছুর পরিমাপ করা যায়। এই বিশিষ্ট অর্থে মাত্রা শব্দের প্রয়োগ আছে ওই ‘ছন্দের অর্থ’ প্রবন্ধেই (পৃ ৩৪-৩৫)।

   
শরদচন্দ পবনমন্দ বিপিন ভরল কুসুমগন্ধ
   
ফুল্ল মল্লি মালতিযুথি মত্তমধুপ ভোরনী-।

এখানে ‘আটটি চলনে ছন্দের চাল সারা হচ্ছে’। অর্থাৎ চালের মাত্রা হচ্ছে চলন। এ দৃষ্টান্তটি সম্বন্ধে আরও বলা হয়েছে, ‘ছয়ের মাত্রায় এ পা