পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৭৫

তা হলে যে-সব সাধু ছন্দ আক্ষরিক বা অক্ষরমাত্রার ছন্দ বলে পরিচিত তার বিশ্লেষণ করা যাবে কিভাবে? “বস্তুত সাধু ভাষার পয়ারও মাত্রাগোনা” (পৃ ১৪২)। কিন্তু মাত্রা গণনা করা হবে কিভাবে? অক্ষর গণনা করে তো নয়। এর উত্তর বাংলা উচ্চারণে স্বরের ধ্বনিকে টান দিয়ে অতি সহজেই বাড়ানো-কমানো যায় (পৃ ৫৫), অর্থাৎ ব্যবহারের প্রয়োজনে একটা সীমার মধ্যে আমাদের স্বরবর্ণগুলোর সংকোচনপ্রসারণ চলে (পৃ ৬২)। এই সংকোচনপ্রসারণ-ক্ষমতারই নামান্তর ‘স্থিতিস্থাপকতা’। যেমন—

মহাভারতে-র্ কথা অমৃতসমা-ন্- -।
কাশীরা-ম্ দা-স্ কহে শুনে পুণ্‌ণ্যবা-ন্ - -।

এখানে যুগ্মধ্বনি আছে ছয়টি—তের্ মান্‌ রাম্ দাস্ পুণ্ এবং বান্। তার মধ্যে একমাত্র পুণ্ ধ্বনিটা সংকুচিত হয়ে এক মাত্রা বলে গণ্য হয়েছে, বাকি পাঁচটা প্রসারিত হয়ে গণ্য হয়েছে দুই মাত্রা বলে। পুণ্ -এর উচ্চারণ সংক্ষিপ্ত, বাকিগুলির বিক্ষিপ্ত; এই বিক্ষিপ্ত বা প্রসারিত উচ্চারণকেই বলা হয়েছে ‘টান’। অযুগ্মধ্বনিগুলি সর্বত্রই এক মাত্রা। এই হিসাবে প্রতিপংক্তিতে চোদ্দ মাত্রা পাওয়া যাবে। এই হিসাবই সংগত, যুক্ত-অযুক্ত-হসন্ত-নির্বিশেষে চোদ্দ অক্ষরে চোদ্দ মাত্রা গণনা করা সংগত নয়,— রবীন্দ্রনাথের এই অভিমতও (পৃ ১৯২-৯৩) প্রকাশ পেয়েছে নানা স্থানে। ‘সতত হে নদ তুমি’ ইত্যাদি দৃষ্টান্তটির বিশ্লেষণ (পৃ ১৪২- ৪৩) লক্ষিতব্য।

    
উদয়্‌দিগন্‌তে অই্ | শুভ্‌র শঙ্‌খ বাজে।

প্রসারিত যুগ্মধ্বনি (ᐱ-চিহ্নিত) দুই মাত্রা, সংকুচিত যুগ্মধ্বনি (ᐯ-চিহ্নিত) এক মাত্রা, অযুগ্মধ্বনিও (অচিহ্নিত) এক যাত্রা, এইভাবে হিসাব করলেই এই পংক্তিতে চোদ্দ মাত্র। পাওয়া যাবে (পৃ ৫২-৫৩)।