পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৮
ছন্দ

মহাভারতে-র্ কথা | অমৃতসমা-ন্ - -।
কাশীরা-ম্ দা-স্ কহে | শুনে পুণ্যবান্ - -।

তের্ মান্ রাম্ দাস্ বান্, এই যুগ্মধ্বনিগুলি উচ্চারণের ‘টানে’ প্রসারিত হয়েছে। এগুলি সবই দুইমাত্রা-পরিমিত। কিন্তু মান্ এবং বান্ এই দুটির পরে আরও দুটি অনুচ্চারিত মাত্রা বা যতিমাত্রা ধরা হয়েছে। সুতরাং মান্ ও বান্ এই দুটি যুগ্মধ্বনি টান ও যতির সাহায্যে চার মাত্রায় পরিণত হয়েছে বলা চলে (পৃ ১৯৩)। সব সময়ই যে যতিমাত্রাকে হিসাবের মধ্যে ধরা হয় তা নয়। যতিমাত্রার কথা হিসাবে না এনে কোনো কোনো স্থলে শুধু আট এবং ছয় অক্ষরমাত্রার যোগেই পয়ারের প্রকৃত রূপ ধরা হয়েছে (পৃ ৬৯, ১৪৩, ১৫৭)।

 মাত্রাবৃত্ত (পৃ ১৮১) — বাংলা ছন্দের তিনটি শাখার (পৃ ১৩২) অন্যতম শাখার প্রচলিত পারিভাষিক নাম ‘মাত্রাবৃত্ত’। সংস্কৃত ও প্রাকৃত ছন্দের প্রধান শাখা দুটি, তার মধ্যে একটির নাম মাত্রাবৃত্ত। এই প্রাচীন মাত্রাবৃত্ত থেকেই বাংলা মাত্রাবৃত্তের উৎপত্তি হয়েছে। মাত্রাবৃত্ত নামটি অমিত্রাক্ষর নামের ন্যায় রূঢ়ার্থে গ্রহণীয়। কেননা ব্যুৎপত্তিগত সাধারণ অর্থে সমস্ত ছন্দই মাত্রাসাপেক্ষ। যে শ্রেণীর ছন্দকে বলা হয়েছে সাধারণ কলামাত্রার ছন্দ, তারই যোগরূঢ় পারিভাষিক নাম মাত্রাবৃত্ত। দ্রষ্টব্য ‘শাখা’।

 বাংলা মাত্রাবৃত্ত রীতির দুই রূপ, প্রাচীন ও আধুনিক। প্রাচীন মাত্রাবৃত্ত রীতির আদর্শ পাওয়া যায় জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যের ছন্দে। তাই এই রীতিকে বলা যায় জয়দেবী (পৃ ২০০)। আধুনিক মাত্রাবৃত্ত রীতির প্রবতর্ক রবীন্দ্রনাথ। মানসী কাব্য তার উৎসস্থল।

 প্রাচীন মাত্রাবৃত্ত রীতিতে দীর্ঘস্বর (আ, ঈ, উ, এ, ও) এবং রুদ্ধদল (ঐ— অই্, ঔ— অউ্, বং, দুঃ, ছন্, দস্, বিদ্, দ্বান্) দুই কলামাত্রা বলে গণিত হয়। এই হিসাবে প্রাচীন মাত্রাবৃত্ত পদ্ধতির ছন্দে প্রতিপর্বে