দণ্ডকল ছন্দও মূলত চতুষ্কলপর্বিক বলে মনে হয় (পৃ ২৪৫)। এই ছন্দটি প্রায় সর্বাংশেই জয়দেবের ‘ললিতলবঙ্গলতা’ বা ‘মুখরমধীরং ত্যজ মঞ্জীরং’ ইত্যাদি রচনার অনুরূপ। পার্থক্য শুধু এই যে, দণ্ডকল ছন্দের প্রথমে থাকে একটি দুইকলার অতিপর্ব এবং সর্বশেষে একটি অতিরিক্ত গুরুধ্বনি।
ঝুল্লণা ছন্দ মূলত পঞ্চকলপর্বিক (পৃ ২৪০) জয়দেবের ‘বদসি যদি কিঞ্চিদপি’ ইত্যাদি রচনার শেষ অংশে অতিরিক্ত তিন ফলা যোগ করলেই ঝুল্লণা ছন্দ হয়।
প্রাচীন বা আধুনিক বাংলায় আর্যা, মালা, গগনাঙ্গ প্রভৃতি ছন্দের প্রতিরূপ দেখা যায় না। কিন্তু জয়দেবী ছন্দের প্রাচীন ও আধুনিক অনুকৃতি প্রচুর আছে। জয়দেবের মাত্রাবৃত্ত ছন্দ অনেকাংশে স্বাধীন; সংস্কৃত বা প্রাকৃত ছন্দশাস্ত্রের নির্দিষ্ট নিয়মের অধীন নয়। প্রাচীন ও আধুনিক বাংলা মাত্রাবৃত্ত রীতির ছন্দ এই স্বাধীন জয়দেবী রীতির আদর্শেই গঠিত হয়েছে। এই গ্রন্থে বৈষ্ণব সাহিত্য থেকে তিনটি প্রাচীন মাত্রাবৃত্ত ছন্দের দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত হয়েছে, একটি চতুষ্কলপর্বিক এবং ছুটি ষট্কলপর্বিক। চারকলা-পর্বের দৃষ্টান্ত এই (পৃ ৫)।—
সুন্দরি | রাধে | আওয়ে ব | নি-।
ব্রজরম | ণীগণ | মুকুটম | ণি−।
জয়দেবী রীতি অনুসারে এখানে রুদ্ধদল এবং দীর্ঘস্বরান্ত মুক্তদল দ্বিমাত্রক এবং হ্রস্বস্বরান্ত মুক্তদল একমাত্রক বলে স্বীকৃত হয়েছে। ব্যতিক্রম ঘটেছে ‘আওয়ে’ শব্দে। ‘ওয়ে’র উচ্চারণ we বা वे। এটি দীর্ঘস্বরান্ত হলেও তার উচ্চারণ হ্রস্ব। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যে জয়দেবী রীতির এ-রকম ব্যতিক্রম এত দেখা যায় যে, এইজাতীয় মাত্রাবৃত্তকে ‘ভাঙা জয়দেবী’ বলেও পরিচিত করা চলে।