পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৪
ছন্দ

সন্ধ্যাবেলার | মসৃণ অন্ধ | কারে
এখানে সেখানে | চোখে আলো খোঁচা | মারে।

—প্রহাসিনী, গরঠিকানী

উভয়ত্রই মসৃণ শব্দের উচ্চারণ ম• স্রিণ, অর্থাৎ ব্যঞ্জনসংঘাতহীন। কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথের রচনাতে এই শব্দটির রেশ অমসৃণ উচ্চারণই দেখা যায়।—

মসৃণ দেহ | উচ্চ ককুদ্ | উদ্ধত বল | বান্।

—তীর্থসলিল, বৈরাগ্যোদয়

এখানে মসৃণ শব্দের উচ্চারণ মস্‌স্রিণ। মসৃণ শব্দের অভীষ্ট ব্যঞ্জনসংঘাতই এখানে ছন্দকে তরঙ্গায়িত করে তুলেছে। তাতে ছন্দের গৌরবই বেড়েছে।

অমৃত, সরীসৃপ, রাজগৃহ, অনাদৃত প্রভৃতি শব্দেরও এ-রকম বৈকল্পিক ব্যবহার দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ এ সব স্থলে ঋকারান্ত বর্ণের লঘুপ্রযত্ন উচ্চারণেরই পক্ষপাতী। যথা—

ধরহ রাগিণী | বিশ্বপ্লাবিনী | অমৃতউৎস | ধারা | ..
সরীসৃপগতি | মিলিল তাহারা | নিষ্ঠুর অভি | মানে।..
রাজগৃহ যত | ভূতলশয়ান | পড়ে আছে ঠাঁই | ঠাঁই।

—সোনার তরী, পুরস্কার 

হেমচন্দ্রের দশমহাবিদ্যায় (মহাদেবের বিলাপ) আছে—

জলনিধি | মন্থনে | অমৃত | উছলিল |
যত সুর | বাঁ-টিল | তা-হে-।

এখানে লঘুপ্রযত্ন উচ্চারণের দ্বারা মৃ ধ্বনিটির স্বাতন্ত্র্য রক্ষিত হয় নি, ফলে ব্যঞ্জনসংঘাতও বাঁচানো হয় নি। বাংলা সাহিত্যে অমৃত শব্দের এ-রকম প্রয়োগ বিরল নয়।