পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
৩০৯

পাদটীকা ১)। এ রকম মাথায়-সমান লঘুগুরুভেদহীন নিরীহ ও নিস্পন্দ মাত্রাবিন্যাসকেই বলা হয়েছে ‘নখদন্তহীন’ (পৃ ১৭)। গুরুত্বভেদে ধ্বনির অসমতাজাত তরঙ্গলীলাই হচ্ছে ছন্দের প্রাণ। দ্রষ্টব্য ‘লয়’।

 এক স্থলে সমান মাপের মাত্রা এই সাধারণ অর্থেই ‘সমমাত্রা’ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে (পৃঃ)।

 সিলেব্‌ল্ (পৃ ৫৩)— বাগ্‌যন্ত্রের একটিমাত্র প্রয়াসে উচ্চারিত শব্দাংশের নাম সিলেব্‌ল্। যেমন— ছন্‌.দ, পুণ্‌.ণ্য.বান্। সিলেব্‌ল্‌এর প্রতিশব্দ হিসাবে ‘দল’ ও ‘ধ্বনি’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। এ দুটির মধ্যে ‘দল’ শব্দই সুষ্ঠুতর। দ্রষ্টব্য ‘দল’, ‘ধ্বনি’ ও ‘যুগ্মধ্বনি’।

 রবীন্দ্রনাথ কোনো কোনো স্থলে সিলেব্‌ল্‌এর প্রতিশব্দ হিসাবে ‘মাত্রা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যেমন— ‘ঐকমাত্রিক’ মানে monosyllabic (পৃ ২৭১)। পক্ষান্তরে তিনি বাংলা মাত্রা অর্থেও ইংরেজি সিলেব্‌ল্ শব্দ ব্যবহার করেছেন (পৃ ২৭৩)। যেমন—‘মনে পড়ে দুই জনে জুঁই তুলে বাল্যে’ ইত্যাদি দৃষ্টান্তে দুই্, জুঁই্ প্রভৃতি এক-সিলেব্‌ল্-আত্মক শব্দের দুই কলাকেই তিনি ‘দুই সিলেব্‌ল্-এর টিকিট’ দিয়েছেন।

 স্পন্দন (পৃ ৩৩)— পূর্ণ শব্দ ‘ছন্দঃস্পন্দন’ (পৃ ১৪৭)। মানে ছন্দের তরঙ্গভঙ্গি বা রিদ্‌ম্। এই স্পন্দন পদ্যেও থাকে, গদ্যেও থাকে। পদ্যে এই স্পন্দনের বিভাগ থাকে সুনিয়মিত ও সুপরিমিত, গদ্যে এই বিভাগ অনিয়মিত ও অপরিমিত এবং অননুভূত। কিন্তু যে গদ্য কবিতার বাহনরূপে স্বীকৃত, তার স্পন্দনবিভাগ পদ্যের মতো ‘অতিনিরূপিত’ না হলেও অনুভবগম্যতার সীমার মধ্যে আসে। এই স্পন্দনশীল গদ্যকেই বলা হয় ছন্দোময় গদ্য (rhythmic prose)। কেননা, এই স্পন্দনই ছন্দের প্রাণ। দ্রষ্টব্য ‘লয়’।