পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আপনার রহস্যময় অপার হৃদয় উদঘাটন করে দিয়েছিল আজ তার মনে যেন একটু সন্দেহ উপস্থিত হয়েছে ; যেন তার মনে হচ্ছে, একেবারে এতখানি আত্মপ্রকাশ কি ভালো হয়েছিল। তাই হৃদয় আবার একটু একটু করে বন্ধ করছে। বাস্তবিক, বিদেশে বিজন অবস্থায় প্রকৃতি বড়ো কাছাকাছির জিনিস। আমি সত্য সত্য দুতিন দিন ধরে মাঝে মাঝে ভেবেছি, পূর্ণিমার পরদিন থেকে আমি আর এ জ্যোৎস্না পাব না ; আমি যেন বিদেশ থেকে আরও একটু বিদেশে চলে যাব ; কাজকমের পরে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় যে একটি শান্তিময় পরিচিত সৌন্দর্য আমার জন্যে নদীতীরে অপেক্ষা ক’রে থাকত সে আর থাকবে না, অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে বোটে ফিরে আসতে হবে । কিন্তু আজ পূর্ণিমা, এ বৎসরকার বসন্তের এই প্রথম পূর্ণিমা। এর কথাটা লিখে রেখে দিলুম। হয়তো অনেক দিন পরে এই নিস্তব্ধ রাত্রিটি মনে পড়বে— ওই টিটি পাখির ডাক-সুদ্ধ এবং ও পারের ওই বাধা নৌকোয় যে আলোটি জলছে সেটি-মুদ্ধ ; এই একটুখানি উজ্জল নদীর রেখা, ওই একটুখানি অন্ধকার বনের একটা পোচ, এবং ওই নির্লিপ্ত উদাসীন পাণ্ডুবর্ণ আকাশ ।