পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○。 শিলাইদহ বৃহস্পতিবার। ৩ ভাজ ১৮৯২ এমন সুন্দর শরতের সকালবেলা চোখের উপর যে কী মুধাবর্ষণ করছে সে অার কী বলব। তেমনি সুন্দর বাতাস দিচ্ছে এবং পাখি ডাকছে। এই ভরা নদীর ধারে, বর্ষার জলে প্রফুল্ল নবীন পৃথিবীর উপর, শরতের সোনালি আলো দেখে মনে হয় যেন আমাদের এই নবযৌবন ধরণীসুন্দরীর সঙ্গে কোন-এক জ্যোতির্ময় দেবতার ভালোবাসাবাসি চলছে, তাই এই আলো এবং এই বাতাস, এই অর্ধ-উদাস অর্ধ-মুখের ভাব, গাছের পাতা এবং ধানের খেতের মধ্যে এই অবিশ্রাম স্পন্দন— জলের মধ্যে এমন অগাধ পরিপূর্ণতা, স্থলের মধ্যে এমন শু্যামশ্ৰী, আকাশে এমন নির্মল নীলিমা । প্রেমের যেমন একটা গুণ আছে, তার কাছে জগতের মহা মহা ঘটনাও তুচ্ছ মনে হয়, এখানকার আকাশের মধ্যে তেমনি যে-একটি ভাব ব্যাপ্ত হয়ে আছে তার কাছে কলকাতারদৌড়ধাপহাসফাসধড়ফড়ানি ঘড়ঘড়ানি ভারি ছোটো এবং অত্যন্ত সুদূর মনে হয়। চার দিক থেকে আকাশ আলো বাতাস এবং গান একরকম মিলিতভাবে এসে আমাকে অত্যন্ত লঘু করে আপনাদের সঙ্গে যেন মিশিয়ে ফেলছে। আমার সমস্ত মনটাকে কে যেন তুলিতে করে তুলে নিয়ে এই রঙিন শরৎপ্রকৃতির উপর আর-এক পোচ রঙের মতো মাখিয়ে দিচ্ছে, তাতে ক’রে এই-সমস্ত নীল সবুজ এবং সোনার উপর আর-একটা যেন নেশার রঙ লেগে গেছে। বেশ লাগছে । ‘কী জানি পরান কী যে চায় বলতে লজ্জা বোধ হয় এবং শহরে থাকলে বলতুম না, কিন্তু ওটা ষোলো-আনা কবিত্ব হলেও এখানে বলতে দোষ নেই। অনেক পুরোনো শুকনো কবিতা, কলকাতায় যাকে উপহাসানলে জালিয়ে ফেলবার যোগ্য মনে হয়, তারা এখানে আসবামাত্র দেখতে দেখতে মুকুলিত পল্লবিত হয়ে ওঠে । > & Co