পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やり(2 বোয়ালিয়া ১৮ নভেম্বর ১৮৯২ ভাবছিলুম এতক্ষণে রেলগাড়ি না জানি কোথায় গিয়ে পৌছল। এই সময়ট সকালবেলায় নওয়াড়ির কাছে উচুনিচু প্রস্তরকঠিন তরুবিরল পৃথিবীর উপর সূর্যোদয় হয়। বোধ হয় নবীন রৌদ্রে এতক্ষণে চারি দিক উজ্জল হয়ে উঠেছে, মাঝে মাঝে আকাশপটে নীল পর্বতের আভাস দেখা যাচ্ছে, শস্যক্ষেত্র বড়ো একটা নেই, দৈবাৎ দুই-এক জায়গায় সেখানকার বুনে চাষার মহিষ নিয়ে চাষ আরম্ভ করেছে ; দুই ধারে বিদীর্ণ পৃথিবী, কালো কালো পাথর, শুকনো জলস্রোতের মুড়ি-ছড়ানো পথচিহ্ন, ছোটো ছোটো অপরিণত শালগাছ, এবং টেলিগ্রাফের তারের উপর কালো লেজ-ঝোলানো চঞ্চল ফিঙে পাখি । একটা যেন বৃহৎ বন্য প্রকৃতি পোষ মেনে একটি জ্যোতির্ময় নবীন দেবশিশুর উজ্জল কোমল করম্পর্শ সর্বাঙ্গে অনুভব করে শান্ত স্থির ভাবে শুয়ে পড়ে আছে । কিরকম ছবিটা আমার মনে আসে বলব ? কালিদাসের শকুন্তলায় আছে তুষ্যন্তের ছেলে শিশু ভরত একটা সিংহশাবক নিয়ে খেলা করত। সে যেন একদিন পশুবৎসলভাবে সিংহশাবকের বড়ো বড়ো রোওয়ার মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে আপনার শুভ্রকোমল অঙ্গুলিগুলি চালনা করছে, আর বৃহৎ জন্তুটা স্থির হয়ে পড়ে আছে, এবং মাঝে মাঝে সস্নেহে একান্ত নির্ভরের ভাবে আপনার মানববন্ধুর প্রতি আড়চক্ষে চেয়ে দেখছে। আর ওই-যে শুকনো স্রোতের মুড়ি-ছড়ানো পথের কথা বললুম, ওতে আমার কী মনে পড়ে বলব ? বিলিতি রূপকথায় পড়া যায়, বিমাতা যখন তার সতিনের ছেলেমেয়েকে ঘর থেকে তাড়িয়ে ছল করে একটা অচেনা অরণ্যের মধ্যে পাঠিয়ে দিলে, তখন তুই > 8 ×