পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

®ხz কটক ফেব্রুয়ারি ১৮৯৩ আমি তো বলি,যত দিন না আমরা একটা-কিছু করে তুলতে পারব তত দিন আমাদের অজ্ঞাতবাস ভালো। কেননা, আমরা যখন সত্যই অবমাননার যোগ্য তখনকিসেরদোহাই দিয়ে পরের কাছে আত্মসম্মান রক্ষা করব ? পৃথিবীর মধ্যে যখন আমাদের একটা-কোনো প্রতিষ্ঠাভূমি হবে, পৃথিবীর কাজে যখন আমাদের একটা-কোনো হাত থাকবে, তখন আমরা ওদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা কইতে পারব। তত দিন লুকিয়ে থেকে চুপ মেরে আপনার কাজ করে যাওয়াই ভালো। দেশের লোকের ঠিক এর উণ্টে ধারণা। যা-কিছু ভিতরকার কাজ, যা গোপনে থেকে করতে হবে, সে তারা তুচ্ছ জ্ঞান করে ; যেটা নিতান্ত অস্থায়ী আস্ফালন এবং আড়ম্বর মাত্র সেইটেতেই তাদের যত ঝোক । আমাদের এ বড়ো হতভাগা দেশ। এখানে মনের মধ্যে কাজ করবার বল রাখা বড়ো শক্ত। যথার্থ সাহায্য করবার লোক কেউ নেই। যার সঙ্গে ফুটে কথা কয়ে প্রাণ সঞ্চয় করা যায় এমন মানুষ দশ-বিশ ক্রোশের মধ্যে একটি পাওয়া যায় না। কেউ চিন্তা করে না, অনুভব করে না, কাজ করে না ; বৃহৎ কার্যের, যথার্থ জীবনের কোনো অভিজ্ঞতা কারও নেই ; বেশ একটি পরিণত মনুষ্যত্ব কোথাও পাওয়া যায় না। সমস্ত মানুষগুলো যেন উপছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাচ্ছে-দাচ্ছে, আপিস যাচ্ছে, ঘুমচ্ছে, তামাক টানছে, আর নিতান্ত নির্বোধের মতে বকর বকর বকছে। যখন ভাবের কথা বলে তখন সেটিমেন্টাল হয়ে পড়ে,আর যখন যুক্তির কথা পাড়ে তখন ছেলেমামুষি করে। যথার্থ মানুষের সংস্রব পাবার জন্যে মানুষের মনে ভারী একটা তৃষ্ণা থাকে। কিন্তু সত্যকার রক্তমাংসের শক্তসমর্থ মানুষ তো নেই— সমস্ত উপছায়, পৃথিবীর সঙ্গে অসংলগ্নভাবে বাম্পের মতো ভাসছে। S8V.