পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৩০ এপ্রেল ১৮৮৬

 ইতিমধ্যে একদিন গো—বাবুদের ওখানে যাওয়া গিয়েছিল। সেখানে আমি আপনার ‘বাঙ্গালার বসন্তোৎসব’এর কথা পাড়লুম, আশ্চর্য হলুম, তাঁরাও সকলে একবাক্যে আপনার এই লেখার প্রশংসা করলেন। আশ্চর্য হবার কারণ এই যে, ভালো লাগা এক, এবং ভালো বলা এক। ভালো জিনিস সহজেই ভালো লাগে, তর্কবিতর্ক যুক্তিবিচার ক’রে ভালো লাগে না—কিন্তু সমালোচনা করবার সময়ে মনের মধ্যে এমনি তর্কবিচারের প্রাদুর্ভাব হয় যে, খপ্‌ ক’রে একটা জিনিসকে ভালো বলা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার হয়ে ওঠে। তখন মনে হয়, যে লেখাটা পড়লুম সেটা লিখছে কে, তাতে আছে কী, তাতে নূতন কথা বলা হয়েছে কি, এইরকম লেখাকে সমালোচকেরা কী ব’লে থাকে, এ কোন্‌ শ্রেণীর অন্তর্গত ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং তার পরে দেখতে দেখতে দলে দলে ‘যদি’ ‘কিন্তু’ ‘কী জানি’ ‘হয়তো’ প্রভৃতি সহস্র রক্তশোষকের আমদানি হয়। তাঁরা চতুর্দিকে তিন ক্রোশের মধ্যে রসকষ কিছুই অবশিষ্ট রাখেন না। ‘ভালো লাগা’ জিনিসটি এমনি কোমল সুকুমার যে, ভালো লেগেছে কি না এই সহজ সত্যটুকু ঘটা ক’রে প্রমাণ করতে বসলে সে ব্যক্তি যায়-যায় হয়ে ওঠে। সমালোচকেরা আপনার বিরুদ্ধে আপনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে থাকে, ভালো লাগলেও তারা যুক্তির দ্বারা প্রমাণ ক’রে দেয় যে ভালো লাগে নি। এই গেল সমালোচনতত্ত্ব। যা হোক, আপনার বহিটা শেষ হয়ে গেলে সাধারণ পাঠকদের কিরকম লাগে জানতে ইচ্ছে রইল। হয়তো বা ভালো লাগতেও পারে। ভালো লাগবার একটা কারণ এই দেখছি, আপনি আপনার কেতাবের মধ্যে আমাদের চিরপরিচিত বাংলাদেশের একটি সজীব মূর্তি জাগ্রত ক’রে তুলেছেন,

১৩