পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ংলার আর কোনো লেখক এতে কৃতকার্য হন নি। এখনকার অধিকাংশ বাংলা বই পড়ে আমার এই মনে হয় যে, আধুনিক বঙ্গসাহিত্যের সময় বাংলাদেশই ছিল কি না ভবিষ্যতে এ নিয়ে তর্ক উঠতে পারে। আপনি হয়তে শুনে থাকবেন কোনো মার্কিন-দেশীয় ভাষাতত্ত্ববিদ বলেন, পাণিনি যে ভাষার ব্যাকরণ সে ভাষাই কোনো কালে ছিল না— তিনি দেখেছেন পাণিনিতে এমন অনেক ধাতু প্রভৃতি পাওয়া যায় সমস্ত সংস্কৃত ভাষায় যা খুজলে মেলে না। এইরূপ নানা কারণে তিনি ঠিক ক’রে রেখেছেন যে, পাণিনি-ব্যাকরণটি এমন একটি ঘোড়ার ডিম যা কোনো ঘোড়ায় পাড়ে নি। অনেক ভাষা আছে যার ব্যাকরণ এখনো তৈরি হয় নি, কিন্তু কে জানত এমন ব্যাকরণ আছে যার ভাষা তৈরি হয় নি! এই ঘটনায় আমার মনে হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন একজন তত্ত্বজ্ঞের প্রাদুর্ভাব হতে পারে যিনি নিঃসংশয়ে প্রমাণ ক’রে দিতে পারবেন যে, বাংলা সাহিত্য যে দেশের সাহিত্য সে দেশ মূলেই ছিল না— তখন বঙ্কিমবাবুর এত সাধের ‘সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং পুরাতত্ত্বের গবেষণার তোড়ে কোথায় ভেসে যাবে। পণ্ডিতেরা বলবেন, বঙ্গসাহিত্য একটা কলেজের সাহিত্য, এটা দশের সাহিত্য নয়—কিন্তু সে কলেজটা ছিল কোথায় এ বিষয়ে কিছুই মীমাংসা হবে না। আপনার সেই লেখাটির মধ্যে বাংলাদেশের সন্ধান পাওয়া যায়, ভারতবর্ষের পূর্ববিভাগের জিয়োগ্রাফির প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। আপনার সেই লেখার মধ্যে অধিকাংশ স্থলে বাংলার ছেলেমেয়ের কালেজি কথা কয় না ও কালেজি কাজ করে না, তারা প্রতিদিন গৃহের মধ্যে যেরকম কথা কয় ও যেরকম কাজ করে তাই দেখতে পাওয়া যায়। অন্য কারও অথবা ক্ষুদ্র আমার লেখায় সেইটি হবার জো নেই। কিন্তু আপনাকে আর অহংকৃত করা হবে না, অতএব এখানেই সমালোচনায় ক্ষান্ত হলুম। S8