পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিকে চেয়ে চেয়ে লোকটার মনে হল, এই রহস্তপাথারের মধ্যে জাল ফেলে দেখা যাক-না কী পাওয়া যায়। এই বলে তো সে ঘুরিয়ে জাল ফেললে। নানা রকমের অপরূপ জিনিস উঠতে লাগল— কোনোট বা হাসির মতো শুভ্র, কোনোটা বা অশ্রুর মতো উজ্জ্বল, কোনোট বা লজ্জার মতে রাঙা । মনের উৎসাহে সে সমস্ত দিন ধীরে ঐ কাজই কেবল করলে ; গভীর তলদেশে যে-সকল সুন্দর রহস্য ছিল সেইগুলিকে তীরে এনে রাশীকৃত করে তুললে। এমনি ক’রে জীবনের সমস্ত দিনটি যাপন করলে। সন্ধ্যার সময় মনে করলে এবারকার মতো যথেষ্ট হয়েছে, এখন এইগুলি নিয়ে তাকে দিয়ে আসা যাক গে। কাকে যে, সে কথাটা স্পষ্ট করে বলা হয় নি— হয়তো তার প্রেয়সীকে, হয়তো তার স্বদেশকে । কিন্তু যাকে দেবে সে তো এ-সমস্ত অপুর্ব জিনিস কখনো দেখে নি। সে ভাবলে,এগুলো কী, এর আবশ্বকতাই বা কী, এতে কী অভাব দূর হবে, দোকানদারের কাছে যাচিয়ে দেখলে এর কতই বা মূল্য হতে পারবে। এক কথায় এ বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি, তত্ত্বজ্ঞান প্রভৃতি কিছুই নয় ; এ কেবল কতকগুলো রঙিন ভাবমাত্র ; তারও যে কোনটার কী নাম, কী বিবরণ তারও ভালো পরিচয় পাওয়া যায় না। ফলত সমস্ত দিনের জাল-ফেলা অগাধ সমুদ্রের এই রত্বগুলি যাকে দেওয়া গেল সে বললে, এ আবার কী ? জেলেরও মনে তখন অনুতাপ হল, সত্যি বটে, এ তো বিশেষ কিছু নয়, আমি কেবল জাল ফেলেছি আর তুলেছি ; আমি তো হাটেও যাই নি, পয়সা-কড়িও খরচ করি নি, এর জন্যে তো আমাকে কাউকে এক পয়সা খাজনা কিম্বা মাশুল দিতে হয় নি। সে তখন কিঞ্চিৎ বিষন্নমুখে লজ্জিতভাবে সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে ঘরের দ্বারে বসে ব’সে একে একে রাস্তায় ফেলে দিলে। তার পরদিন সকলবেলায় ›byግ