পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বহু চিন্তা ক’রে কাজ করতে হত না; সকল কাজ সুন্দরভাবে সহজে সম্পন্ন হত ; তা হলে তাদের একটা সহজ নীতিও দাড়িয়ে যেত— অর্থাৎ, বহু যুগ থেকে অবিচ্ছেদে যে কাজ করে আসছে সেই কাজের কাছে তাদের মন বশ মানত, সেই বহু যুগের অভ্যস্ত কর্তব্য থেকে কোনো সামান্ত শক্তি তাদের বিক্ষিপ্ত করতে পারত না। স্ত্রীলোককে প্রকৃতি মা ক’রে দিয়ে তাকে একেবারে ছাচে ঢালাই করে ফেলেছে; পুরুষের সেরকম কোনো স্বাভাবিক আদিম বন্ধন নেই, সেইজন্যে একটি ধ্রুবকেন্দ্র-আশ্রয়ে পুরুষ সর্বতোভাবে তৈরি হয়ে যায় নি ; সে চিরকাল ধ’রে কেবলই বিক্ষিপ্ত হয়ে হয়ে এসেছে, তার শতমুখী উচ্ছঙ্খল প্রবৃত্তি তাকে একটি সুন্দর সমগ্রতায় গড়ে তোলে নি। আমি সেদিনকার চিঠিতে বন্ধনকে সৌন্দর্যের কারণ বলে অনেকখানি লিখেছিলুম মনে আছে ; মেয়েরা সেইরকম একটি স্বাভাবিক ছন্দের বন্ধনে সম্পূর্ণ সুন্দর হয়ে তৈরি হয়ে এসেছে, আর পুরুষরা গদ্যের মতো বন্ধনহীন এবং সৌন্দর্যহীন— তাদের আগাগোড়ার মধ্যে কোনো একটি ছাদ নেই’ । মেয়েদের সঙ্গে যে লোকে চিরকাল সংগীতের, কবিতার, লতার, ফুলের, নদীর তুলনা দিয়ে এসেছে এবং কখনো পুরুষের সঙ্গে দেবার কথা তাদের মনেও উদয় হয় নি তার কারণই এই। প্রকৃতির সমস্ত সুন্দর জিনিস যেমন স্বসম্বদ্ধ সুসম্পূর্ণ সুসংহত সুসংযত মেয়েরাও সেইরকম; তাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা, কোনো চিন্তা, কোনো মন এসে তাদের ছন্দোভঙ্গ করে দিচ্ছে না ; কোনো তর্ক এসে তাদের মিল নষ্ট করে দিচ্ছে না। Ꮌ>8