পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

నవి পতিসর শুক্রবার রাত্রি। ১৭ মার্চ ১৮৯৪ জ্যোৎস্না প্রতি রাত্রেই অল্প অল্প করে ফুটে উঠছে। আমি তাই আজকাল সন্ধের পরেও অনেক ক্ষণ বাইরে বেড়াই। নদীর এ পারের মাঠে কোথাও কিছু সীমাচিহ্ন নেই, গাছপালা নেই, চষা মাঠে । একটি ঘাসও নেই, কেবল নদীর ধারের ঘাসগুলো প্রখর রৌদ্রে শুকিয়ে হলদে হয়ে এসেছে। জ্যোৎস্নায় এই ধুধু শূন্ত মাঠ ভারী । অপুর্ব দেখতে হয়। সমুদ্র এই রকম অসীম বলে মনে হয়, কিন্তু তার একটা অবিশ্রাম গতি এবং শব্দ আছে– এই মাটির সমুদ্রের কোথাও কিছু গতি নেই, শব্দ নেই, বৈচিত্র্য নেই, প্রাণ নেই— ভারী একটা উদাস মৃত শূন্যতা। চলবার মধ্যে কেবল এক প্রান্তে আমি একটি প্রাণী চলছি এবং আমার পায়ের কাছে একটি ছায়া চলে বেড়াচ্ছে। বহু দূরের মাঠে এক-এক জায়গায়, যেখানে গত শস্তের শুকনো গোড়া কিছু অবশিষ্ট ছিল, সেইখানে চাষারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ; মাঝে মাঝে কেবল সেই আগুনের শ্রেণী দেখা যাচ্ছে। একটা প্রকাগু বিস্তারিত প্রাণহীনতার উপর যখন অস্পষ্ট চাদের আলো এসে পড়ে তখন যেন একটা বিশ্বব্যাপী বিচ্ছেদশোকের ভাব মনে আসে ; যেন একটি মরুময় বৃহৎ গোরের উপরে একটি সাদা কাপড়-পরা মেয়ে উপুড় হয়ে মুখ ঢেকে মূৰ্ছিতপ্রায় নিস্তব্ধ পড়ে রয়েছে ।