পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পতিসর ২৪ মার্চ ১৮৯৪ আজকাল আমার সন্ধ্যাভ্রমণের একমাত্র সঙ্গীটির অভাব হয়েছে। সেটি অার কেউ নয়, আমাদের শুক্লপক্ষের চাদ। কাল থেকে আর র্তার দেখা নেই। ভারী অসুবিধে হয়েছে, শীঘ্রই অন্ধকার হয়ে যায়, যথেষ্ট বেড়াবার পক্ষে একটু ব্যাঘাত জন্মায়। আজকাল ভোরের বেলায় চোখ মেলেই ঠিক আমার খোলা জানলার সামনেই শুকতারা দেখতে পাই— তাকে আমার ভারী মিষ্টি লাগে– সেও আমার দিকে চেয়ে থাকে, যেন বহু কালের আমার আপনার লোক। মনে আছে, যখন শিলাইদহে কাছারি ক’রে সন্ধেবেলায় নেীকো করে নদী পার হতুম, এবং রোজ আকাশে সন্ধ্যাতার দেখতে পেতুম, আমার ভারী একটা সান্তন বোধ হত। ঠিক মনে হ’ত, আমার নদীটি যেন আমার ঘর সংসার এবং আমার সন্ধ্যাতারাটি আমার এই ঘরের গৃহলক্ষ্মী— আমি কখন কাছারি থেকে ফিরে আসব এই জন্যে সে উজ্জল হয়ে সেজে বসে আছে। তার কাছ থেকে এমন একটি স্নেহস্পর্শ পেতুম ! তখন নদীটি নিস্তব্ধ হয়ে থাকত, বাতাসটি ঠাণ্ডা, কোথাও কিছু শব্দ নেই, ভারী যেন একটা ঘনিষ্ঠতার ভাবে আমার সেই প্রশান্ত সংসারটি পরিপূর্ণ হয়ে থাকত। আমার সেই শিলাইদহে প্রতি সন্ধ্যায় নিস্তব্ধ অন্ধকারে নদী পার হওয়াট খুব স্পষ্টরূপে প্রায়ই মনে পড়ে। ভোরের বেলায় প্রথম দৃষ্টিপাতেই শুকতারাটি দেখে তাকে আমার একটি বহুপরিচিত সহাস্য সহচরী না মনে করে থাকতে পারি নে ; সে যেন একটি চিরজাগ্রত কল্যাণকামনার মতো ঠিক আমার নিদ্রিত মুখের উপর প্রফুল্ল স্নেহ বিকিরণ করতে থাকে ।