পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বধিয়ে, পকেটে রেখে নিশ্চিন্ত আছি। কাল দেখি, কোন অজ্ঞাত রসাতল থেকে আর-একটা হাওয়া দিয়েছে, আকাশের ভাবগতিক সমস্ত বদলে গেছে ; তখন আর মনে হয় না, এ দুর্যোগ কোনো কালে কাটিয়ে উঠতে পারব। এসবের উৎপত্তি কোনখানে। কোন শিরার মধ্যে,স্নায়ুর মধ্যে,কী-একটা নড় চড় হয়ে গেছে— মাঝের থেকে আমি আমার সমস্ত বলবুদ্ধি নিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারি নে। নিজের ভিতরকার এই অপার রহস্তের কথা মনে করলে ভারী ভয় হয় ; কী করতে পারব না-পারব কিছুই জোর করে বলতে পারিনে ; মনে হয়, কিছুই না জেনে আমি এ কী-একটা প্রকাণ্ড কাণ্ড সর্বদাই স্কন্ধে বহন করে নিয়ে বেড়াই, আয়ত্ত করতে পারি নে, অথচ এর হাতও কিছুতেই এড়াতে পারি নে ; জান নে আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে, আমিই বা একে কোথায় নিয়ে যাব।— আমার স্কন্ধে এই ভয়ংকর রহস্য যোজনা করে দেবার কী প্রয়োজন ছিল ? বুকের ভিতর কী হয়, শিরার মধ্যে কী চলছে, মস্তিষ্কের মধ্যে কী নড়ছে, কত কী অসংখ্য কাও আমাকে অবিশ্রাম আচ্ছন্ন করে ঘটছে— আমি দেখতেও পাচ্ছি নে, আমার সঙ্গে পরামর্শও করছে না ; অথচ সবসুদ্ধ নিয়ে খাড়া হয়ে দাড়িয়ে কর্তব্যক্তির মতো মুখ করে মনে করছি, আমি একজন আমি ! তুমি তো ভারী তুমি— তোমার নিজের কতটুকুই বা জানো তার ঠিক নেই। আমি তো অনেক ভেবেচিন্তে এইটুকু ঠিক করেছি, আমি নিজেকে কিছুই জানি নে। আমি একটা সজীব পিয়ানো যন্ত্রের মতো ; ভিতরে অন্ধকারের মধ্যে অনেকগুলো তার এবং কলবল আছে, কখন কে এসে বাজায় কিছুই জানি নে, কেন বাজে তাও সম্পূর্ণ বোঝা শক্ত। কেবল কী বাজে সেইটেই জানি— সুখ বাজে কি ব্যথা বাজে, কড়ি বাজে কি কোমল বাজে, তালে বাজে কি বেতালে বাজে, এইটুকুই বুঝতে পারি। আর জানি, আমার অক্টেভ নীচের দিকেই বা কত দুর, উপরের দিকেই বা কত দূর ।... না, তাও কি ঠিক জানি । ૨ ૦ ૧