পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অক্টোবর ১৮৮৭ আমি প্রায় এক মাস কাল দাৰ্জিলিঙে কাটিয়ে এলুম। আপনার পত্র কলকাতায় আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল। আমি ফিরে এসে , পেলুম। আপনাকে অনেক দিন থেকে লিখি-লিখি করছি, কিন্তু দৈববিপাকে হয়ে ওঠে নি। এবার আমার ততটা দোষ ছিল না। আমার কোমরে বাত হয়ে কিছুকাল শয্যাগত হয়ে পড়েছিলুম, এখনো ভালো করে সারি নি। তবে এখন বিছানা থেকে উঠে বসেছি। কিন্তু বেশিক্ষণ চৌকিতে বসে থাকতে পারি নে। আমার কোমর ছাড়া পৃথিবীতে আর আর সমস্ত মঙ্গল। আমার স্ত্রী কন্যা দার্জিলিঙে, আমি কলকাতায় ঘরে ব’সে বিরহ ভোগ করছি— কিন্তু বিরহের চেয়ে কোমরের বাতটা বেশি গুরুতর বোধ হচ্ছে। কবির যাই বলুন, আমি এবার টের পেয়েছি বাতের কাছে বিরহ লাগে না। কোমরে বাত হলে চন্দনপঙ্ক লেপন করলে দ্বিগুণ বেড়ে ওঠে, চন্দ্রমাশালিনী পূর্ণিমাযামিনী সাম্বনার কারণ না হয়ে যন্ত্রণার কারণ হয়, আর স্নিগ্ধ সমীরণকে বিভীষিকা ব’লে জ্ঞান হয়— অথচ কালিদাস থেকে রাজকৃষ্ণ রায় পর্যন্ত কেউই বাতের উপর এক ছত্র কবিতা লেখেন নি, বোধ হয় কারও বাত হয় নি। আমি লিখব। এই প্রসঙ্গে আমি আপনাকে একটা তত্ত্বের মীমাংসা জিজ্ঞাসা করি— বিরহের কষ্টই বা কেন কবিতার বিষয় আর বাতের কষ্টই বা কেন কবিতার বিষয় নয় ? কোমরটাকে যত সামান্য বোধ হত এখন তো তত সামান্ত বোধ হয় না । হৃদয় ভেঙে গেলেও মানুষ মাথা তুলে খাড়া হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারে— কিন্তু কোমর ভেঙে গেলেই মানুষ একেবারে কাৎ, তার আর উত্থানশক্তি থাকে না। তখন প্রেমের আহবান, স্বদেশের আহবান, সমস্ত পৃথিবীর আহবান এলেও সে কোমরে টার্পিন তেল X 3