পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্মৃতি এবং তখনকার মনের ভাব খুব স্পষ্ট করে মনে আনবার চেষ্টা করছিলুম। যখন পেনেটির বাগানে ছিলুম, যখন পৈতের নেড় মাথা নিয়ে প্রথমবার বোলপুরের বাগানে গিয়েছিলুম, যখন পশ্চিমের বারান্দার সবশেষের ঘরে আমাদের ইস্কুল-ঘর ছিল এবং আমি একটা নীল কাগজের ছেড়া খাতায় বাক লাইন কেটে বড়ে বড়ো কাচা অক্ষরে প্রকৃতির বর্ণনা লিখতুম, যখন তোষাখানার ঘরে শীতকালের সকালে চিন্তা বলে একটা চাকর গুনগুন স্বরে মধুকানের মুরে গান করতে করতে মাখন দিয়ে রুটি তোষ করত— তখন আমাদের গায়ে গরম কাপড় ছিল না, একখানা কামিজ প’রে সেই আগুনের কাছে বসে শীত নিবারণ করতুম এবংসেই সশব্দবিগলিত-নবনী-সুগন্ধি রুটিখণ্ডের উপরে লুব্ধত্বরাশ দৃষ্টি নিক্ষেপ ক’রে চুপ ক’রে বসে চিন্তার গান শুনতুম— সেইসমস্ত দিনগুলিকে ঠিক বর্তমানের করে দেখছিলুম এবং সেইসমস্ত দিনগুলির সঙ্গে এই রৌদ্রালোকিত পদ্মা এবং পদ্মার চর ভারী একরকম সুন্দরভাবে মিশ্রিত হচ্ছিল— ঠিক যেন আমার সেই ছেলেবেলাকার খোলা জানলার ধারে বসে এই পদ্মার একটি দৃশ্বখণ্ড দেখছি বলে মনে হচ্ছিল। তার পরে আমি ভাবলুম, এই তো আমি কোনো উপকরণ না নিয়ে কেবল গল্প লিখে এবং বর্তমানকে দূর কালের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে নিজেকে নিজে মুখী করতে পারি। তার পরেই মনে হল, প্রবাদ অাছে : Nothing succeeds like success । টাকায় টাকা আনে, তেমনি সুখও সুখ আনে। সুখের সময়েই আমরা মনে করি, আমাদের সুখী হবার অসীম ক্ষমতা আছে ; তার পরে তুঃখের সময়ে দেখতে পাই, কোনো ক্ষমতাই কোনো কাজ করছে না, সব কলই একেবারে বিগড়ে গেছে। কাল বোধ হয় একটু কিছু মুখের আভাস মনের ভিতর রীরী করে উঠেছিল, তাই সমস্ত কলগুলো একেবারে চলতে আরম্ভ

> ግ