পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করেছিল, জীবনের অতীত স্মৃতি এবং প্রকৃতির বর্তমান শোভ। একসঙ্গেই সজীব হয়ে উঠেছিল— তাই সকালে আজ জেগে উঠেই মনে হল, আমি কবি। যতই কবিত্ব থাক, যতই ক্ষমতার গর্ব করি, মানুষ ভয়ানক পরাধীন। পৃথিবীর উপর থেকে এই কাঙাল জীবগুলো লম্বা হয়ে উঠে, খাড়া হয়ে, শীর্ণ হয়ে বেড়াচ্ছে— আস্ত স্বর্গটি চায়, তার পরে টুকরোটাকরা যা পায় তাতেই ক্ষুধানিবৃত্তির চেষ্টা করে— অবশেষে ভিক্ষাপ্রসারিত উর্ধ্বগামী দেহ ধুলিলুষ্ঠিত হয়ে পড়ে এবং মৃত্যুকে স্বর্গপ্রাপ্তি বলে রটনা করে। যেটুকু মুখে জীবনের সমস্ত কলগুলো চলে সেইটুকু মুখ যদি চিরকাল ধরে রাখা যায় তা হলে সমস্ত শক্তি বিকশিত, সমস্ত কাজ সম্পন্ন ক’রে যাওয়া যেতে পারে। আজ গিরিবালা অনাহূত এসে উপস্থিত হয়েছেন, কাল বড়ো আবশ্বকের সময় তার দোতুল্যমান বেণীর সূচ্যগ্রভাগটুকুও দেখা যাবে না । কিন্তু সে কথা নিয়ে আজ আন্দোলনের দরকার নেই। শ্ৰীমতী গিরিবালার তিরোধান-সম্ভাবনা থাকে তো থাক, আজ যখন র্তার শুভাগমন হয়েছে তখন সেটা আনন্দের বিষয় সন্দেহ নেই। এবারকার পত্রে অবগত হওয়া গেল যে, আমার ঘরের ক্ষুদ্রতমাটি ক্ষুদ্র ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করতে শিখেছে। আমি সে চিত্র বেশ দেখতে পাচ্ছি। তার সেই নরম-নরম মুঠোর আঁচড়ের জন্যে আমার মুখটা নাকটা তৃষার্ত হয়ে আছে। সে যেখানে-সেখানে আমাকে মুঠে ক’রে ধীরে টলমলে মাথাটা নিয়ে হাম ক’রে খেতে আসত এবং খুদে খুদে আজুলগুলোর মধ্যে আমার চষমার হারটা জড়িয়ে নিতান্ত নির্বোধ নিশ্চিন্ত গম্ভীর ভাবে গাল ফুলিয়ে চেয়ে থাকত, সেই কথাটা মনে পড়ছে। SR Nobr