পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8२ কলিকাতা ৯ এপ্রিল ১৮৯৫ ঢং ঢং করে দশটা বাজল। চৈত্র মাসের দশটা নিতান্ত কম বেল। নয়। রৌদ্র বা বা করে উঠেছে, কাকগুলো কেন যে এত ডাকাডাকি করছে জানি নে, লকেট কমলালেবু এবং কাচামিঠে আম -ওয়াল চুপড়ি মাথায় উচ্চ স্বরে সুর করে আমাদের দেউড়ির কাছ দিয়ে ডেকে যাচ্ছে । ইচ্ছা করছে কোনো একটা বিদেশে যেতে— বেশ একটি ছবির মতো দেশ– পাহাড় আছে, ঝর্না আছে, পাথরের গায়ে খুব ঘন শৈবাল হয়েছে, দূরে পাহাড়ের ঢালুর উপরে গোরু চরছে, আকাশের নীল রঙটি খুব স্নিগ্ধ এবং সুগভীর, পাখি পতঙ্গ পল্লব এবং জলধারার একটা বিচিত্র মৃত্ন শব্দমিশ্র উঠে মস্তিষ্কের মধ্যে ধীরে ধীরে তরঙ্গাভিঘাত করছে। দূর হোক গে ছাই, আজ আর কিছুতে হাত না দিয়ে দক্ষিণের ঘরে একলাটি হাত পা ছড়িয়ে একটা কোনো ভ্রমণবৃত্তান্তের বই নিয়ে পড়ব মনে করছি— বেশ অনেকগুলো ছবিওয়ালা নতুন-পাতা-কাট বই। আলোচনা করবার মতো, মনের উন্নতি সাধন করবার মতো বই পৃথিবীতে অসংখ্য আছে, কিন্তু কুঁড়েমি করবার মতো বই ভারী কম ; সেই রকম বই লিখতে অসামান্ত ক্ষমতার দরকার। অবকাশের অবকাশত্ব কিছুমাত্র নষ্ট করবে না বরং তাকে রঙিন ও রসালে করে তুলবে, অথচ তাকে মন দিয়ে পড়বারও খোরাক দেবে, এই দুই দিক বাচিয়ে লেখা শক্ত। স্টীল পেনে লিখে মনের উপর দাগ কেটে দিয়ে যাবে না, পালকের কলমে লিখে লেখাটা মনের উপর দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, এমন পুষ্পকরথের সারথি পাওয়া যায় কোথায় ! Xbr ২৭ 3