পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

N80 কলিকাতা ২৪ এপ্রিল ১৮৯৫ এ দিকে দেখতে দেখতে সমস্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে এসে গুরগুরু ক’রে মেঘ ডাকতে লাগল, এবং মাঝে মাঝে প্রবল বাতাসে দক্ষিণের বাগানের ছোটো বড়ো সমস্ত গাছগুলো হুস্হাস ক’রে নিশ্বাস ফেলতে লাগল। মধ্যাহ্নটি স্নিগ্ধ ছায়াচ্ছন্ন হয়ে চারি দিক ঘনিষ্ঠ হয়ে এল। মনের ভিতরটা একটা অকারণ চঞ্চলতায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল — তার হাতে যে কাজটাই দিই সে ছুড়ে ছুড়ে ফেলে দিতে লাগল। মনের গতিক আকাশের গতিকের মতো— কিছুই বলা যায় না। মাসের মধ্যে উনত্রিশ দিন সে ছোটোখাটো উপস্থিত কাজ নিয়ে বেশ চালিয়ে দেয়, কোনো গোল করে না ; হঠাৎ ত্রিশ দিনের দিন সে-সমস্ত কাজে সে পদাঘাত করতে থাকে ; বলে, “আমাকে এমন একটা কিছু কাজ দাও যা খুব মস্ত— যাতে আমার সমস্ত দিন রাত্রি, সমস্ত ভূতভবিষ্যৎ একেবারে গ্রাস ক’রে ফেলতে পারে। তখন হাতের কাছে কোথায় বা কী পাওয়া যায়— কেবল ঘরে ঘরে বারান্দায় বারান্দায় ঘুরে ঘুরে বেড়াতে থাকি। কতকগুলো ছিন্নবিচ্ছিন্ন খণ্ডবিখণ্ড দস্তুর-বাধা কাজের মধ্যে মনটা যখন লাফ দিয়ে দিয়ে বেড়ায় তখনি তার সুস্থ অবস্থা বলি, আর যখন সে একটা প্রবল আবেগ— একটা বৃহৎ কর্মের মধ্যে একটা অহংবিস্মৃত ঐক্য লাভ করবার জন্তে ব্যাকুল হয়ে ওঠে তখন তাকে বলি পাগলামি। কিন্তু আমি তো মনে করি, মানুষের যথার্থ স্বাভাবিক অবস্থাই হচ্ছে সেই একটি প্রবল নিষ্ঠার মধ্যে সমস্ত জীবনটাকে ঐক্যবন্ধনে বদ্ধ করবার ইচ্ছ। এই জন্যেই প্রতিদিন সমাজের মধ্যে থেকে, এক-এক দিন মনে হয়, “আমায় বাশিতে ডেকেছে কে ? -: ግ8