পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8S এই আঁকাবাক ইছামতী নদীর ভিতর দিয়ে চলেছি। এই ছোটাে খামখেয়ালি বর্ষাকালের নদীটি— এই-যে হুই ধারে সবুজ ঢালু ঘাট, দীর্ঘ ঘন কাশবন, পাটের খেত, আখের খেত আর সারিসারি গ্রাম— এ যেন একই কবিতার কয়েকটা লাইন,আমি বারবার আবৃত্তি ক’রে যাচ্ছি এবং বারবারই ভালো লাগছে। পদ্মার মতো বড়ো নদী এতই বড়ো যে সে যেন ঠিক মুখস্থ ক’রে নেওয়া যায় না, আর এই কেবল ক’টি বর্ষা-মাসের-দ্বারা-অক্ষর-গোনা ছোটো বাকা নদীটি যেন বিশেষ ক’রে আমার হয়ে যাচ্ছে । পদ্মানদীর কাছে মানুষের লোকালয় তুচ্ছ, কিন্তু ইছামতী মানুষঘোষা নদী ; তার শাস্ত জলপ্রবাহের সঙ্গে মানুষের কর্মপ্রবাহের স্রোত মিশে যাচ্ছে । সে ছেলেদের মাছ ধরবার এবং মেয়েদের স্নান করবার নদী। স্নানের সময় মেয়ের যে-সমস্ত গল্পগুজব নিয়ে আসে সেগুলি এই নদীটির হাস্যময় কলধ্বনির সঙ্গে এক সুরে মিলে যায়। আশ্বিন মাসে মেনকার ঘরের পার্বতী যেমন কৈলাসশিখর ছেড়ে একবার তার বাপের বাড়ি দেখে শুনে যান, ইছামতী তেমনি সম্বৎসর অদর্শন থেকে বর্ষার কয়েক মাস আনন্দহাস্য করতে করতে তার আত্মীয় লোকালয়গুলির তত্ত্ব নিতে আসে। তার পরে ঘাটে ঘাটে মেয়েদের কাছে প্রত্যেক গ্রামের সমস্ত নূতন খবর শুনে নিয়ে, তাদের সঙ্গে মাখামাখি সখিত্ব ক’রে আবার চলে যায় । সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আকাশ মেঘে অন্ধকার ; গুরুগুরু মেঘ ডাকছে এবং ঝোড়ে হাওয়ায় তীরের বনঝাউগুলো তুলে উঠছে। বঁাশঝাড়ের মধ্যে ঘন কালীর মতো অন্ধকার এবং জলের উপর Sፃ ፄ