পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8వ কুষ্টিয়া ৫ অক্টোবর ১৮৯৫ কে আমাকে গভীর গম্ভীর ভাবে সমস্ত জিনিস দেখতে বলছে, কে আমাকে অভিনিবিষ্ট স্থির কর্ণে সমস্ত বিশ্বাতীত সংগীত শুনতে প্রবৃত্ত করছে, বাইরের সঙ্গে আমার সমস্ত সূক্ষ্ম এবং প্রবলতম যোগসূত্রগুলিকে প্রতিদিন সজাগ সচেতন করে তুলছে। হৃদয়ের প্রাত্যহিক পরিতৃপ্তির প্রাচুর্যে মানুষের কোনো ভালো হয় না ; তাতে প্রচুর উপকরণের অপব্যয় হয়ে কেবল অল্পই সুখ উৎপন্ন করে ; এবং কেবল আয়োজনেই সময় কেটে গিয়ে উপভোগের অবসরমাত্র থাকে না। কিন্তু ব্ৰতযাপনের মতো জীবনযাপন করলে দেখা যায়, অল্প সুখই প্রচুর সুখ এবং সুখই একমাত্র সুখকর নয়। চিত্তের দর্শন স্পর্শন শ্রবণ মনন -শক্তিকে যদি সচেতন রাখতে হয়, যা-কিছু পাওয়া যায় তাকেই পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করবার শক্তিকে যদি উজ্জল রাখতে হয়, তা হলে নিজেকে অতিপ্রাচুর্য থেকে বঞ্চিত করা চাই। Goetheর একটি কথা আমি মনে করে রেখেছি, সেটা শুনতে সাদাসিধা কিন্তু বড়োই গভীর— Entbehren sollst du, sollst entbehren. Thou must do without, must do without. কেবল হৃদয়ের অতিভোগ নয়, বাইরের মুখস্বাচ্ছন্দ্য জিনিসপত্রও আমাদের অসাড় করে দেয় । বাইরের সমস্ত যখন বিরল তখনি নিজেকে ভালো রকমে পাই । আমরা বাইরের শাস্ত্র থেকে যে ধর্ম পাই সে কখনোই আমার ধর্ম হয়ে ওঠে না। তার সঙ্গে কেবলমাত্র একটা অভ্যাসের যোগ জন্মে। ধর্মকে নিজের মধ্যে উদ্ভূত করে তোলাই মানুষের চিরজীবনের ২৮২