পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

}(t ) শিলাইদহ ১২ ডিসেম্বর ১৮৯৫ সে দিন সন্ধ্যাবেলায় একখানা ইংরিজি সমালোচনার বই নিয়ে কবিতা সৌন্দর্য আর্ট প্রভৃতি মাথামুণ্ড নানা কথার নানা তর্ক পড়া যাচ্ছিল। এক এক সময় এই-সমস্ত কথার বাজে আলোচনা পড়তে পড়তে শ্রাস্তচিত্তে সমস্তই মরীচিকাবৎ শূন্ত বোধ হয় ; মনে হয়, এর বারো আন কথা বানানো। সে দিন পড়তে পড়তে মনটার ভিতরে একটা নীরস শ্রান্তির উদ্রেক হয়ে একটা বিক্রপপরায়ণ সন্দেহশয়তানের আবির্ভাব হল । এ দিকে রাত্রিও অনেক হওয়াতে বইটা ধা করে মুড়ে ধপ্র করে টেবিলের উপর ফেলে দিয়ে শুতে যাবার উদ্দেশে এক ফুয়ে বাতি নিবিয়ে দিলুম। দেবা মাত্রই হঠাৎ চারি দিকের সমস্ত খোলা জানলা থেকে বোটের মধ্যে জ্যোৎস্না একেবারে ভেঙে পড়ল। হঠাৎ যেন আমার চমক ভেঙে গেল ! আমার ক্ষুদ্র একরত্তি বাতির শিখা শয়তানের মতো নীরস হাসি হাসছিল, অথচ সেই অতিক্ষুদ্র বিক্রপ হাসিতে এই বিশ্বব্যাপী গভীর প্রেমের অসীম আনন্দচ্ছটাকে একেবারে আড়াল করে রেখেছিল। নীরস গ্রন্থের বাক্যরাশির মধ্যে কী খুজে বেড়াচ্ছিলুম। সে কতক্ষণ থেকে সমস্ত আকাশ পরিপূর্ণ করে নিঃশব্দে বাইরে দাড়িয়ে ছিল। যদি দৈবাৎ না দেখে অন্ধকারের মধ্যে শুতে যে তুম তা হলেও সে আমার সেই ক্ষুদ্র বাতির ব্যঙ্গের কিছুমাত্র প্রতিবাদ না করে নীরবেই নিলীন হয়ে যেত। যদি ইহজীবনে নিমেষের জন্যও তাকে না দেখতে পেতুম এবং শেষরাত্রের অন্ধকারে শেষবারের মতো শুতে যে তুম তা হলেও সেই বাতির আলোরই জিত থেকে যেত, অথচ সে বিশ্বকে ব্যাপ্ত করে সেই রকম নীরবে সেইরকম মধুর মুখেই হাস্ত করত— আপনাকে গোপন করত না, আপনাকে প্রকাশও করত না । Հե Ն