পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাতায়নে বসে যখন কেবল নিমেষের মতো দেখলুম সেই একলা বাড়ি তার খেলার জায়গা এবং ফাকা ঘরগুলো নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে তখন সমস্ত হৃদয়ট বিদ্যুৎবেগে সেই বাড়ির উপরে ঝাপিয়ে গিয়ে পড়ল, অমনি বুকের ভিতরে বা দিক থেকে ডান দিক পর্যন্ত ধক ক’রে একটা শব্দ হল, হুস ক’রে গাড়ি চলে গেল, আকের খেত মিলিয়ে গেল— বাস, সমস্ত ফুরোল— কেবল হঠাৎ ঘা খাওয়ার দরুন মনের ছোটো বড়ো তু চারটে তার প্রায় দেড় সুর আন্দাজ নেবে গেল। কিন্তু গাড়ির এঞ্জিন এ-সকল বিষয়ে বড়ো একটা চিন্তা করে না, সে লোহার রাস্তার উপর দিয়ে এক রেখে চলে যায়, কোন লোক কোথায় কী ভাবে যাচ্ছে, সে বিষয়ে তার খেয়াল করবার সময় নেই— সে কেবল গল গল ক’রে জল খায়, হুস হুস ক’রে ধোওয়া ছাড়ে,গ গা ক’রে চীৎকার করে, এবং গড় গড় ক’রে চলে যায়। সংসারের গতির সঙ্গে এর সুন্দর তুলনা দেওয়া যেতে পারত, কিন্তু সেটা এত পুরোনো এবং অনাবশ্বক যে কেবল একবার নির্দেশ ক’রে ক্ষান্ত থাকা গেল। খাণ্ডালার কাছাকাছি এসে মেঘ এবং বৃষ্টি। সেই-সব পাহাড়গুলোর উপরে মেঘ জমে ঝাপসা হয়ে গেছে— ঠিক যেন কে পাহাড় একে তার পরে রবার দিয়ে ঘসে দিয়েছে ; খানিক খানিক outline দেখা যাচ্ছে এবং খানিকট৷ পেন্সিলের দাগ চার দিকে ধেবড়ে গেছে। অবশেষে গাড়ির ঘণ্টা দিলে— দূর থেকে গাড়ির নিদ্রাহীন লাল চক্ষু দেখা গেল ; ধরণী থর থর করে কাপতে লাগল ; স্টেশনের কর্তার চটি জুতো, ঘুটিদেওয়া চাপকান এবং টিকির উপরে তকমা-দেওয়া গোল টুপি পরে নানা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল— বিপুল হাত-ল্যাণ্ঠন চার দিকে আলো নিক্ষেপ করতে লাগল— খানসামাবর্গ সচকিত হয়ে যে যার জিনিসপত্র আগলে দাড়াল, বে— ঘুমোতে লাগল। গাড়িতে ওঠা و&9\