পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S\ు পতিসর 零 ৭ মাঘ ১৮৯১ ছোটাে নদীটি ঈষৎ বেঁকে এইখানে একটুখানিকোণের মতে,একটু কোলের মতো তৈরি করেছে ; দুই ধারের উচু পাড়ের মধ্যে সেই কোলের কোণটুকুতে বেশ প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকি,একটু দূর থেকে আমাদের আর দেখা যায় না। নৌকাওয়ালার উত্তর দিক থেকে গুন টেনে টেনে আসে, হঠাৎ একটা বাক ফিরেই এই জনহীন মাঠের ধারে অকারণে একটা মস্ত বোট বাধা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় । ‘হঁ। গা, কাদের বজরা গা ? "জমিদার বাবুর। এখানে কেন ? কাছারির সামনে কেন বঁtধ নি ? “হাওয়া খেতে এসেছেন।’ এসেছি হাওয়ার চেয়ে আরো ঢের বেশি কঠিন জিনিসের জন্যে । যা হোক, এরকম প্রশ্নোত্তর প্রায় মাঝে মাঝে শুনতে পাওয়া যায়। এইমাত্র খাওয়া শেষ ক’রে বসেছি, এখন বেলা দেড়টা। বোট খুলে দিয়েছে, আস্তে আস্তে কাছারির দিকে চলেছে। বেশ একটু বাতাস দিচ্ছে। তেমন ঠাণ্ডা নয়, দুপুর বেলার তাতে অল্প গরম হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে ঘন শৈবালের মধ্যে দিয়ে যেতে খস খস শব্দ হচ্ছে । সেই শৈবালের উপরে অনেকগুলো ছোটো ছোটে কচ্ছপ আকাশের দিকে সমস্ত গলা বাড়িয়ে দিয়ে রোদ পোহাচ্ছে। অনেক দূরে দূরে একটা একটা ছোটো ছোটো গ্রাম আসছে। গুটিকতক খোড়ে ঘর, কতকগুলি চালশূন্ত মাটির দেয়াল, ছটাে-একটা খড়ের স্ত,প, কুলগাছ আমগাছ বটগাছ এবং বাশের ঝাড়, গোটাতিনেক ছাগল চরছে, গোটাকতক উলঙ্গ ছেলেমেয়ে ; নদী পর্যন্ত একটি গড়ানে র্কাচা ঘাট, সেখানে কেউ কাপড় কাচছে, কেউ নাইছে, কেউ বাসন মাজছে, কোনো কোনো লজ্জাশীল বধু দুই আঙুলে ঘোমটা 8bア