পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্দিকে চলে গেল। আমি আমার ডায়ারি লিখছি এবং মাঝে মাঝে সম্মুখের পথের দিকে অন্যমনস্ক হয়ে চেয়ে দেখছি— এমন সময় বিষম একটা হাক-ডাক শোনা গেল। আমি উঠে জানলার কাছে গিয়ে দেখলুম বেদে-আশ্রমের সম্মুখে লোক জড়ো হয়েছে— এবং ওরই মধ্যে একটু ভদ্রগোছের একজন লাঠি আম্ফালন ক’রে বিষম গালমন্দ দিচ্ছে, কর্তা বেদে দাড়িয়ে নিতান্ত ভীত কম্পিত ভাবে কৈফিয়ত দেবার চেষ্টা করছে। বুঝতে পারলুম, কী একটা সন্দেহের কারণ হয়েছে, তাই পুলিশের দারোগ এসে উপদ্রব বাধিয়ে দিয়েছে। মেয়েট বসে বসে আপন মনে বাখারি ছুলে যাচ্ছে, যেন সে একলা ব’সে আছে এবং কোথাও কিছু গোলমাল নেই। হঠাৎ সে উঠে দাড়িয়ে পরম নিভীক চিত্তে দারোগার মুখের সামনে বার বার বাহু আন্দোলন ক’রে উচ্চৈঃস্বরে বক্তৃত৷ দিতে আরম্ভ করলে । দেখতে দেখতে দারোগার তেজ প্রায় বারোআন পরিমাণ কমে গেল— অত্যন্ত মৃত্ন ভাবে তুটো-একটা কথা বলবার চেষ্টা করলে, কিন্তু একটুও অবসর পেলে না। যে ভাবে এসেছিল সে ভাব অনেকটা পরিবর্তন ক’রে ধীরে ধীরে চলে যেতে হল। অনেকটা দূরে গিয়ে চেচিয়ে বললে, “আমি এই ব’লে গেলাম, তোমাদের এখান হৎকে যাবার লাগবে। আমি ভাবলুম, আমার বেদে প্রতিবেশীরা এখনি বুঝি খুটি দৰ্মা তুলে, পুটুলি বেঁধে, ছানাপোনা নিয়ে, শুয়োর তাড়িয়ে এখান থেকে প্রস্থান করবে। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ নেই ; এখনও তারা নিশ্চিন্ত ভাবে বসে বসে বঁাখারি চিরছে, রাধছে-বাড়ছে, উকুন বাচছে। আমার এই খোলা জানলার মধ্যে দিয়ে নানা দৃশ্য দেখতে পাই । সব-মৃদ্ধ বেশ লাগে– কিন্তু এক-একটা দেখে ভারি মন বিগড়ে যায়। গাড়ির উপর অসম্ভব ভার চাপিয়ে অসাধ্য রাস্তায় যখন @bア