পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२ শিলাইদহ ফেব্রুয়ারি ১৮৯১ কাছারির পরপারের নির্জন চরে বোট লাগিয়ে বেশ আরাম বোধ হচ্ছে। দিনটা এবং চারি দিকটা এমনি সুন্দর ঠেকছে সে আর কী বলব। অনেক দিন পরে আবার এই বড়ো পৃথিবীটার সঙ্গে যেন দেখাসাক্ষাৎ হল। সেও বললে এই-যে’। আমিও বললুম এই-যে’। তার পরে দুজনে পাশাপাশি বসে আছি, আর কোনো কথাবার্তা নেই। জল ছল ছল করছে এবং তার উপরে রোদছর চিক্‌ চিক্‌ করছে ; বালির চর ধুধু করছে, তার উপর ছোটাে ছোটাে বনঝাউ উঠেছে। জলের শব্দ, দুপুর বেলাকার নিস্তব্ধতার বা বাঁ, এবং ঝাউ-ঝোপ থেকে দুটো-একটা পাখির চিক্‌ চিক্‌ শব্দ, সবসুদ্ধ মিলে খুব একটা স্বপ্নাবিষ্ট ভাব। খুব লিখে যেতে ইচ্ছে করছে— কিন্তু আর-কিছু নিয়ে নয়, এই জলের শব্দ, এই রোদস্তুরের দিন, এই বালির চর। মনে হচ্ছে রোজই ঘুরে-ফিরে এই কথাই লিখতে হবে ; কেননা, আমার এই একই নেশা, আমি বার বার এই এক কথা নিয়েই বকি — বড়ো বড়ো নদী কাটিয়ে আমাদের বোটট। একটা ছোটো নদীর মুখে প্রবেশ করছে। দুই ধারে মেয়েরা স্নান করছে, কাপড় কাচছে, এবং ভিজে কাপড়ে এক-মাথা ঘোমটা টেনে জলের কলসী নিয়ে ডান হাত তুলিয়ে ঘরে চলেছে ; ছেলেরা কাদা মেখে জল ছুড়ে মাতামাতি করছে এবং একটা ছেলে বিনা সুরে গান গাচ্ছে, একবার দাদা বলে ডাক্ রে লক্ষ্মণ । উচু পাড়ের উপর দিয়ে অদূরবর্তী গ্রামের খড়ের চাল এবং বাশবনের ডগা দেখা যাচ্ছে। আজ মেঘ কেটে গিয়ে রোদস্তুর দেখা দিয়েছে। যে মেঘগুলো আকাশের প্রান্তভাগে অবশিষ্ট আছে সেগুলো সাদা هوا