পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লুচি খেয়ে আলো এবং লোকজনের মধ্যে শুয়ে পড়লুম— শূন্তে মশা এবং চতুষ্পার্শ্বে আরসোল সঞ্চরণ করছে ; ঠিক পায়ের কাছেই আর-এক ব্যক্তি শয়ন করেছে, তার গায়ে মাঝে মাঝে আমার প৷ ঠেকছে ; চারটে-পাচটা নাক অবিশ্রাম ডাকছে, মশকদষ্ট বীতনিদ্র হতভাগ্যগণ তামাক টানছে— এবং এরই মধ্যে ভৈরো রাগিণী । রাত যখন সাড়ে তিনটে তখন কতকগুলি ব্যস্তবাগীশ লোক পরস্পরকে জাগ্রত হতে উৎসাহিত করতে লাগল। আমি নিতান্ত কাতর ভাবে শয্যা ত্যাগ করে আমার চৌকিটাতে ঠেস দিয়ে প্রভাতের প্রতীক্ষায় বসে রইলুম। একটা বিচিত্র অভিশাপের মতো রাতটা কেটে গেল। একটা খালাসির কাছে সংবাদ পেলুম, স্টিমার এমনি আটকে গেছে আজ সমস্ত দিন নড়বে না। একজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করলুম, কলকাতা-মুখী কি কোনো জাহাজ ইতিমধ্যে পাওয়া যাবে। সে হেসে বললে, এই জাহাজই গম্যস্থানে পৌছে পুনশ্চ কলকাতায় ফিরবে, অতএব ইচ্ছে করলে এই জাহাজে করেই ফিরতে পারি। সৌভাগ্যক্রমে অনেক টানাটানির পর প্রায় দশটার কাছাকাছি জাহাজ চলতে আরম্ভ করলে।