পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২

চাঁদনি চক। কটক

৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯১

 —বাবু খুব মোটাসোটা বর্ধিষ্ণু চেহারার লোক, তাঁর ভাবখানা খুব একজন লম্বাচৌড়া কৃষ্ণবিষ্ণুর মতো। বয়স যথেষ্ট হয়েছে—একখানি কোঁচানো চাদর কাঁধে, ফিট্‌ফাট্‌ সাজ, গায়ে এসেন্সের গন্ধ, দু-থাক চিবুক, প্রমাণসই গোঁফ, কপাল গড়ানে, বড়ো বড়ো ড্যাবা চোখ আত্মম্ভরিতায় অর্ধনিমীলিত, কথা কবার সময় চোখের তারা আকাশের দিকে ওঠে, জলদগম্ভীর স্বরে অতি মৃদুমন্দ সুস্থ সহাস্য ভাবে কথা কন—সময় যেন অনুগত ভৃত্যের মতো তাঁর অবসর-অপেক্ষায় এক পাশে স্তব্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে—কোনো বিষয়ে তিলমাত্র তাড়া নেই। চোখ দুটো উল্টে আমাকে একবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জ্যোতি এখন কোথায় আছে?’ প্রশ্নকর্তার অবিচলিত গাম্ভীর্যে আমার অন্তঃকরণ সসন্ত্রমে শশব্যস্ত হয়ে উঠল, আমি মৃদু বিনীত ভাবে আমার দাদার রাজধানীতে অবস্থান জ্ঞাপন করলুম। তিনি বললেন, ‘বীরেন্দ্রের সঙ্গে আমি একসঙ্গে পড়েছি।’ শুনে আমার চিত্ত আরও অভিভূত হয়ে পড়ল। এর উপরে যখন তিনি, কারও পরামর্শের অপেক্ষা না রেখে অকস্মাৎ অসময়ে এখানে আসা সম্বন্ধে আমার বালকোচিত অবিবেচনার উল্লেখ করলেন, তখন আমি কিরকম ম্লান অপ্রতিভ হয়ে গেলুম সে অনুমান করা শক্ত হবে না। আমি কেবলই নতমুখে বারবার বলতে লাগলুম, ‘আমি প্রকৃত অবস্থা কিছুই জানতুম না, আর-কখনো আসি নি, এই প্রথম আসছি।’ তার থেকে তর্ক উঠল, ‘জ্যোতি কখন্‌ এসেছিল?’ সময়-নির্ণয় সম্বন্ধে বরদার সঙ্গে তাঁর ঘোর অনৈক্য হল।

৮২