পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এভার। দুপুর বেলার নিস্তব্ধতার মধ্যে যখন কোনো রাখাল দূর থেকে ঊর্ধ্বকণ্ঠে তার সঙ্গীকে ডাক দেয়, এবং একটা নৌকো ছপ্‌ ছপ্‌ শব্দ ক’রে ঘরের দিকে ফিরে যায়, এবং মেয়েরা ঘড়া দিয়ে জল ঠেলে দেয় তারই ছল্‌ছল্‌ শব্দ ওঠে, তার সঙ্গে মধ্যাহ্নপ্রকৃতির নানারকম অনির্দিষ্ট ধ্বনি—দুই-একটা পাখির ডাক, মৌমাছির গুন্‌ গুন্‌, বাতাসে বোটটা আস্তে আস্তে বেঁকে যেতে থাকে তারই একরকম কাতর সুর—সবসুদ্ধ এমন একটা করুণ ঘুমপাড়ানি গান, যেন মা সমস্ত বেলা বসে বসে তার ব্যথিত ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে ভুলিয়ে রাখবার চেষ্টা করছে, বলছে ‘আর ভাবিস নে, আর কাঁদিস নে, আর কাড়াকাড়ি মারামারি করিস নে, আর তর্কবিতর্ক রাখ্‌, একটুখানি ভুলে থাক্‌, একটুখানি ঘুমো’—ব’লে তপ্ত কপালে আস্তে আস্তে করাঘাত করছে।

৯৬