পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোলপুর, ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, >bra)ー | এখানে রাত্রে কোন গির্জের ঘড়িতে ঘণ্টা বাজে না—এবং কাছাকাছি কোন লোকালয় না থাকাতে পার্থীরা গান বন্ধ করবামাত্রই সন্ধ্যার পর থেকে একেবারে পরিপূর্ণ নিস্তব্ধতা আরম্ভ হয় । প্রথম রাত্রি এবং অৰ্দ্ধরাত্রে বিশেষ কোন প্রভেদ নেই। কলকাতায় অনিদ্রার রাত্রি মস্ত একটা অন্ধকার নদীর মত, খুব ধীরে ধীরে চলতে থাকে, বিছানায় চক্ষু মেলে চিৎ হয়ে পড়ে তার গতিশব্দ মনে মনে গণনা করা যেতে পারে ; এখানকার রাত্রিটা যেন একটা প্রকাণ্ড নিস্তরঙ্গ হ্রদের মত—আগাগোড়া সমান থম্ থৰ্ম্ম করচে কোথাও কিছু গতি নেই। যতই এপাশ ফিরি এবং যতই ওপাশ ফিরি একটা মস্ত যেন অনিদ্রার গুমই করে ছিল, তার মধ্যে প্রবাহের লেশমাত্র পাওয়া যায় না। আজ সকালে কিছু বিলম্বে শয্যাত্যাগ করে আমার নীচেকার ঘরের তাকিয়। ঠেসান দিয়ে বুকের উপর শ্লেট রেখে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে সকালের বাতাস এবং পার্থীর ডাকের মধ্যে একটি কবিতা লিখতে প্রবৃত্ত হয়েছিলুম । বেশ জমে এসেছিল— মুখ সহ্যস্ত, চক্ষু ঈষৎ মুদ্রিত, মাথা ঘন ঘন আন্দোলিত এবং গুন গুন আবৃত্তি উত্তরোক্তর পরিস্ফুট হয়ে উঠছিল—এমন সময় একখানি চিঠি, একখানি সাধনা, একখানি সাধনার প্রািফ এবং একখানি Monist কাগজ পাওয়া গেল। চিঠিখানি পড়লুম এবং সাধনার পাতাগুলোর মধ্যে চোখ দুটোকে একবার সবেগে ঘোড়দৌড় করিয়ে নিয়েএলুম। তার পরে পুনশ্চ শিরশ্চালন করে অস্ফুট গুঞ্জনস্বরে কবিত্বে প্রবৃত্তহলুম। শেষ করে ফেলে তবে অন্য কথা । একটি কবিতা লিখেফেল্পে যেমন আনন্দ হয় হাজার গদ্য লিখলেও তেমন হয় না কেন তাই ভাবচি। কবিতায় মনের ভাব বেশ একটি সম্পূর্ণত লাভ করে, বেশ যেন হাতে করে তুলে নেবার মত । আর, গদ্য যেন এক বস্ত আলগা জিনিষ–একটি জায়গা ধরলে সমস্তটি অম্নি স্বচ্ছন্দে উঠে আসে না—