পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( २ ० ० ) বাসন এবং সাধনা-অনুরূপ পরকাল থাকে তাহলে এবার আমি এই ওয়াড়-পরানোপৃথিবী থেকে বেরিয়ে গিয়ে যেন এক উদার উন্মুক্ত সৌন্দর্য্যের আনন্দলোকে গিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারি। যারা সৌন্দর্য্যের মধ্যে সত্যি সত্যি নিমগ্ন হতে অক্ষম তারাই । সৌন্দৰ্য্যকে কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়ের ধন বলে অবজ্ঞা করে –কিন্তু এর মধ্যে যে অনিৰ্ব্বচনীয় গভীরতা আছে, তার আস্বাদ যারা পেয়েচে তারা জানে সৌন্দৰ্য্য ইন্দ্রিয়ের চূড়ান্ত শক্তিরও অতীত—কেবল চক্ষু কৰ্ণ দূরে থাক, সমস্ত হৃদয় নিয়ে প্রবেশ করলেও ব্যাকুলতার শেষ পাওয়া যায় না । আমি ভদ্রলোক সেজে সহরের বড় রাস্তায় আনাগোনা করচি, পরিপাটী ভদ্রলোকদের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথাবাৰ্ত্ত কয়ে জীবন মিথ্যে কাটিয়ে দিচ্চি ! আমি অস্তরে অসভ্য অভদ্ৰ—আমার জন্তে কোথাও কি একটা ভারি সুন্দর অরাজকতা নেই, কতকগুলো ক্ষ্যাপী লোকের আনন্দমেলা নেই । কিন্তু আমি কি এ সমস্ত বকচি—কাব্যের নায়কের এইরকম সব কথা বলে—কনভেনশ্যানালিটির উপরে তিন-চার পাতযোড়া স্বগত উক্তি প্রয়োগ করে—আপনাকে সমস্ত মানবসমাজের চেয়ে বড় মনে করে । বাস্তবিক এ সব কথা বলুতে লজ্জা করে । এর মধ্যে যে সত্যটা অাছে সে বহুকালথেকে ক্রমাগত কথাচাপা পড়ে আসচে। পৃথিবীতে সবাই ভারি কথা কয়—তার মধ্যে আমি একজন অগ্রগণ্য—হঠাৎ এতক্ষণে সে বিষয়ে চেতন হল । পুঃ—আসল যে কথাটা বলতে গিয়েছিলুম—সেটা বলে নিই—ভয় নেই, আবার চার পাতা জুড়বেনা–কথাটা হচ্চে—পয়লা আমাঢ়ের দিন বিকেলে খুব মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে গেছে । বাস ।